ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর
1 min read
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনের সাথে এক ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক এবং চুক্তি স্বারের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাদের মধ্যে ‘দারুণ ভালো’ আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার গ্যারান্টির বিনিময়ে কিম জং আন পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করার অঙ্গীকার করেছেন।
খবর বিবিসির। : দুই নেতার স্বারিত দলিলে কিম কোরিয়া উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এর পর এক নজিরবিহীন সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এমন কিছু খুঁটিনাটি প্রকাশ করেনÑ কাগজপত্রে যার উল্লেখ নেই। সিঙ্গাপুরে ঐতিহাসিক একান্ত বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা ‘একটি বড় পেণাস্ত্র ইঞ্জিন পরীা ত্রে’ ধ্বংস করতে রাজি হয়েছেন এবং এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে ল্য করে সামরিক মহড়া চালানো বন্ধ করবে। তিনি এসব যুদ্ধের মহড়াকে ‘ব্যয়বহুল এবং উসকানিমূলক’ বলেও বর্ণনা করেন। কেউ কেউ অবশ্য এই মহড়া বন্ধের অঙ্গীকারকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড় দিয়েছে’ বলে চিত্রিত করতে চাইছেন। তবে এই প্রথম মতাসীন অবস্থায় কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং উত্তর কোরিয়ার নেতার বৈঠক হলো – যারা কিছুকাল আগেও পরস্পরের উদ্দেশ্যে অপমানকর ব্যঙ্গবিদ্রƒপ ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। : কি ঐকমত্য হলো : শীর্ষ বৈঠকের মূল বিষয় ছিল পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং উত্তেজনা হ্রাস। স্বারিত চুক্তিতে বলা হয়, দুই দেশ নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবে। : কিম কোরিয়ান উপদ্বীপকে সম্পূর্ণরূপে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করার জন্য তার অবিচল এবং দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। কিভাবে এটা করা হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি বলে কোন কোন বিশ্লেষক মতামত দিয়েছেন। তাদের কথা, মাত্র দেড় পৃষ্ঠার এই দলিলটি অস্পষ্ট এবং ‘এর ভেতরে কিছু নেই।’ তবে পরে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, পরমাণু অস্ত্র ত্যাগের ব্যাপারটি যেন যাচাই করে দেখা যায় – তাতে কিম রাজি হয়েছেন। : ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আপাতত বলবৎ থাকবে, তবে কিম অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলে পরে তা তুলে নেয়া হতে পারে। এই বৈঠকের পর দণি কোরিয়া বলেছে, এর মধ্যে দিয়ে শীতল যুদ্ধের যুগের শেষ সংঘাতের অবসান হলো। একে আরো স্বাগত জানিয়েছেন রাশিয়া এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও। : চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংই বলেছেন, এখন উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা যেতে পারে। তবে ইরান বলেছে, এমনও হতে পারে যে ট্রাম্প দেশে ফিরে যাবার আগেই এ চুক্তি বাতিল করে দিতে পারেন। : বৈঠকের সমালোচনা : ঐতিহাসিক এই বৈঠক নিয়ে অধিকাংশ মানুষ আগ্রহী হলেও সমালোচনাও করছেন অনেকে। লেখক ভিক্টোরিয়া ব্রাউনওয়ার্থ তার টুইটারে লিখেছেন, যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সাথে করমর্দন করেননি ও জাস্টিন ট্রুডোকে ‘দুর্বল’ বলেছেন, সেই ট্রাম্প নিজ পরিবারের মানুষ হত্যা করে এমন একজন একনায়কের সাথে বৈঠক করছেন। : মুন জে–ইনের নির্ঘুম রাত : দণি কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে–ইন বলেছেন বৈঠকের আগে নির্ঘুম রাত কেটেছে তার। তবে মি. মুন আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই বৈঠক পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, শান্তি ও দুই কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির েেত্র নতুন যুগের সৃষ্টি করবে। : অর্কিড কূটনীতি : সিঙ্গাপুরের জাতীয় ফুল অর্কিড হওয়ায়, বারাক ওবামা, নরেন্দ্র মোদি, শি জিন পিংসহ আরো অনেক বিশ্বনেতা সিঙ্গাপুর সফরের পর তাদের নামে অর্কিডের নামকরণ করা হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা কিম জং–আনের নামেও কি তাহলে অর্কিডের নামকরণ করা হবে? অথবা ঐতিহাসিক বৈঠকের নামেও নামকরণ করা হতে পারে অর্কিডের। : কে উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে : আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প থেকে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও সেনাপ্রধান জন কেলি। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনও ছিলেন বৈঠকে, যার মন্তব্যের কারণে প্রায় পন্ড হতে বসেছিল বৈঠক। : উত্তর কোরিয়ার প থেকে বৈঠকে যারা ছিলেন : কিম ইয়ং–চল: তাকে কিম জং–আনের ‘ডানহাত’ বলে মনে করা হয়। এ মাসের শুরুতে বৈঠকের প্রস্তুতির জন্য ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। রি ইয়ং–হো: উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৯০ এর দশকেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন এই কূটনীতিক। রি সু–ইয়ং: পিয়ংইয়ংয়ের শীর্ষপর্যায়ের এই কর্মকর্তা এর আগে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। : সংপ্তি সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন দুই নেতা : ডোনাল্ড ট্রাম্প: আমরা নিশ্চিতভাবে অত্যন্ত গঠনমূলক ও খুবই সফল একটি আলোচনা সম্পন্ন করতে পারবো। এটি আমার জন্য সম্মানের এবং আমি নিশ্চিত যে আমাদের মধ্যে চমৎকার সুসম্পর্ক তৈরি হবে। কিম জং–আন: এখানে আসা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমাদের অতীতের বিশ্বাস ও ধ্যানধারণা এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু সেসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়েই আমরা আজ এ পর্যন্ত এসেছি। : বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় কী ছিল : কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সম্ভব হলে পিয়ংইয়ংয়ে মার্কিন দূতাবাস স্থাপন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে এই বৈঠকে। কথা হতে পারে দণি কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়েও। : বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা : বহুল আলোচিত এই বৈঠকটি শেষপর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়েই তৈরি হয়েছিল সংশয়। লিবিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ার সাথে উত্তর কোরিয়ার তুলনা করায় ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে বাগবিতন্ডা শুরু হলে একপর্যায়ে ২৪ মে ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে মি. কিম ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি লিখলে আবারো বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র : বিবিসি :