কালিয়াগঞ্জে রাজবংশীদের মহা মিলন উৎসবে অনুপস্থিত কালিয়াগঞ্জ এর রাজবংশী বিধায়ক তপন দেব সিংহ
তনময় চক্রবর্তী রাজবংশী মানুষদের উপর ভর করে অনেকে বিধায়ক অনেকে সাংসদ অনেকে মন্ত্রী হয়ে যায় কিন্তু তারপরে রাজবংশীদের দিকে ফিরেও তাকায় না। এমন টা চলতে পারে না দীর্ঘদিন ধরে। এবার সময় এসেছে গর্জে উঠার । বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ এর জুন্ডি পীর এলাকায় রাজবংশী গভুর সংঘ আযোজিত রাজবংশী মানুষদের মহামিলন উৎসবে অংশগ্রহণ করে একথা বললেন রাজবংশী ভাষা একাডেমি এবং রাজবংশী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদের চেয়ারম্যান বংশী বদন বর্মন। এদিন রাজবংশী অধ্যুষিত কালিয়াগঞ্জ এ যখন এই মিলন উৎসব অনুষ্ঠিত হলো সেই সময় দেখা গেল না রাজবংশী অধ্যুষিত কালিয়াগঞ্জ এর সেই রাজবংশী বিধায়ক তপন দেব সিংহ কে ।
কার্যত এদিন বংশী বদন বর্মন কালিয়াগঞ্জ এ তাদের রাজবংশী বিধায়ক কে সতর্ক করে দিয়ে বললেন রাজবংশীদের জন্য আপনি কাজ করুন তাহলে আমরা আপনার সাথে আছি না হলে আমরা আমাদের মত পরিবর্তন করব। তিনি বলেন বহু রাজবংশী বিধায়ক শাসকদলের রয়েছে এটা কোনো গোপন বিষয় নয়। কোন রাজনৈতিক প্রতিনিধি জাতির কথা ভাবে আর বেশিরভাগ রাজনৈতিক প্রতিনিধি তার দলের কথা ভাবে। সে ডান-বাম যে দলেরই হোক।
দলীয় সত্তা আলাদা জিনিস আর জাতিসত্তা আলাদা জিনিস। যে বিচক্ষণ মানুষ জাতির কথা হবে সে যে দলই থাকুক সে দলের কাজ করবে। যদি না করে থাকে তাহলে তার দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। আর কেউ যদি দূরদর্শিতা সম্পূর্ণ মানুষ হয় সে যে দলেরই থাকুক কোন না কোনভাবে সে রাজবংশী মানুষদের কাজ করবে। এদিন বংশী বদন বর্মন আরো বলেন বিগত দিনে যে সরকার ছিল সেই বামফ্রন্ট সরকার রাজবংশী মানুষদের কথা তারা চিন্তা করেনি রাজবংশী সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছে। তার সবচেয়ে বড় নজির তার মতন একজন নির্দোষ মানুষকে সাত বছর জেলে পুরে রেখেছিল।কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার রাজবংশী মানুষদের কথা চিন্তা করে যে সমস্ত কাজগুলো করেছে তা এক নজিরবিহীন।
সামনে ভোট আছে এই সময় দাঁড়িয়ে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কি এবার বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থী দেওয়া হবে কি এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ভোটের এখনো দেরী আছে। এই নিয়ে এখনও তারা কোনো চিন্তাভাবনা করে নি। সময় আসলেই তার উত্তর দেওয়া হবে। তিনি বলেন তারা কাকে ভোট দিবে এখনো পর্যন্ত তারা ঠিক করেনি। হোটেল আগেই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে। তবে তিনি বলেন বর্তমান রাজ্য সরকার যেভাবে রাজবংশীদের দিকে মানবিকভাবে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে মানবিক দিক থেকে তাদের উচিত এই সরকারকে সমর্থন করা।
বংশী বদন বর্মন বলেন তারা কোন দল করে না তারা কোন দলের তাবেদারী করে না তাই যারাই তাদের দিকে তাকাবে এবং রাজবংশীদের উন্নয়নের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন তারাই তাদের কাছে আপনজন। যেহেতু এই সরকার তাদের দিকে তাকিয়েছে তাই এখন অব্দি তারাই তাদের কাছে আপনজন। ইসলামপুর দাড়িভিট এ রাজেশ ও তাপসের খুনের বিচার এখনো অব্দি হলো না আগামী দিনে যদি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে এর সিবিআই তদন্ত হবে গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী র মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন খুনখারাপি এগুলো বিচার করা বিচার করার দায়িত্ব কোটের।
এগুলো বিচারাধীন বিষয়। তাই কোন দল এলো আর কোন দল গেল এগুলোর উপর বিচার করে অপরাধীদের বিচার হয়না। উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষের সামনে এই মহা মিলন উৎসব অনুষ্ঠিত হলো তখন কালিয়াগঞ্জ এর বিধায়ক তপন দেব সিংহ সেই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকায় সেখানকার রাজবংশী মানুষরা অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
তাদের বক্তব্য রাজবংশীদের মহা মিলন উৎসব যখন হচ্ছে কালিয়াগঞ্জ এর তখন কেন রাজবংশী বিধায়ক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেন না। তবে এদিন দেখা যায় কালিয়াগঞ্জ এর পৌর প্রশাসক তৃণমূল কংগ্রেসের শচীন সিংহ রায় কে এই অনুষ্ঠানে হাজির হতেন যেমন তেমনি জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্য দধি মোহন দেব শর্মা কে সেখানে উপস্থিত থাকতে। পাশাপাশি এদিন উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের বিজেপির সদস্য কমল সরকার।
বিজেপি জেলা পরিষদের সদস্য কমল সরকার কে। অর্থাৎ বলা যেতেই পারে রাজবংশীদের ঐক্যে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস যে এককাট্টা সেটা কিন্তু প্রমাণ করে দেখিয়ে দিল রাজবংশীর মহা মিলন উৎসবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির নেতারা।
এদিন দেখা যায় কালিয়াগঞ্জ এর পৌর প্রশাসক তৃণমূল কংগ্রেসের শচীন সিংহ রায় কে আগ বাড়িয়ে বিজেপির জেলা পরিষদের সদস্য কমল সরকার কে নমস্কার জানিয়ে কাছে ডেকে করমর্দন করতে। শুধু তাই নয় একসঙ্গে তারা দুজন বেশ কিছুক্ষণ হাসি মজা এবং ঠাট্টা করে সময় কাটালেন। স্বভাবতই মঞ্চে উপস্থিত অনেকেই বলছেন রাজনীতিতে সবই সম্ভব।এদিন গাভুর সংঘের প্রধান কার্যকর্তা সুধীর সরকারের নেতৃত্বে এই মহামিলন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজবংশী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বোর্ড সদস্য মোহনলাল বর্মন, জেলা পরিষদ সদস্য দধিমোহন দেবশর্মা ও কমলচন্দ্র সরকার, বিশিষ্ট সাংবাদিক সুনীল চন্দ, কালিয়াগঞ্জ পঞ্চানন বর্মা স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি রমেন্দ্রনাথ রায়, বিশ্ব রাজবংশী উন্নয়ন মঞ্চের সম্পাদক গনেশ রায়, পঞ্চানন বর্মা সেবা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক পবিত্র বর্মন প্রমুখ। পন দিবনা, পন নিবনা স্লোগান সামনে রেখে এদিন কালিয়াগঞ্জ রাজবংশী গাভুর সংঘ আয়োজিত এই মহামিলন মেলায় ছিল বৈরাতি নাচ, কুষান নাচ, গোয়ালিনী নাচ, হুদুম নাচ, ভাওয়াইয়া গান, দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী নটুয়া গান।