December 5, 2024

রায়গঞ্জ শহরে নৃতি কত্থক কেন্দ্রের উদ্দ্যোগে ওয়ার্কশপ,সেমিনার ও শাস্ত্রীয় নৃত্য উৎসব-

1 min read

রায়গঞ্জ শহরে নৃতি কত্থক কেন্দ্রের উদ্দ্যোগে ওয়ার্কশপ,সেমিনার ও শাস্ত্রীয় নৃত্য উৎসব

তপন চক্রবর্তী–কালিয়াগঞ্জ(উত্তর দিনাজপুর)–গত ২০শে ডিসেম্বর থেকে ২২শে ডিসেম্বর তিন দিন ব্যাপী নৃতি কত্থক কেন্দ্রের উদ্দ্যোগে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহরের বিধান মঞ্চে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হল তিন দিনের শাস্ত্রীয় নৃত্যের উপর ওয়ার্কশপ,কর্মশালা ও শাস্ত্রীয় নৃত্য উৎসব।

যা উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহরে এই প্রথমই শুধু নয় এটি একটি দুঃসাহসিক উদ্যোগ বলা যায়।প্রথম দিন সন্ধ্যায় ছিল আলোচনা সভা। বিষয় – ” নৃত্যে অভিনয় এর ভূমিকা “। বক্তা ছিলেন মমতা মহারাজ, ডক্টর জয়ন্ত ভট্টাচার্য, পাপিয়া ভৌমিক ও কাজী আলী আফতাব। বিষয়টি বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাঞ্চল ভাবে উপস্থাপন করেন বক্তারা।

দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন সুশ্রী মমতা মহারাজ , ড: জয়ন্ত ভট্টাচার্য্য ও অরিন্দম সরকার। অনুষ্ঠান শুরু হয় নৃতি কত্থক কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের ” বন্দনার ” মাধ্যমে। এরপর মঞ্চে আসেন সুদূর ব্যাঙ্গালোর থেকে আগত শ্রীমতি পাপিয়া ভৌমিক গণেশ বন্দনা দিয়ে শুরু করেন তার অসাধারন অনুষ্ঠান। টুকরা, আমোদ, পরন, তৎকার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন। নৃত্যশিল্পী পাপিয়া দেবীর পায়ের কাজ ও অভিনয় ছিল অসাধারণ।

একটি ঠুমরী গানের সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলেন নববিবাহিতা বধুর পিতৃলয় ছেড়ে শ্বশুরালয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। কুচিপুড়ি নৃত্যের ডালি নিয়ে আসেন বহরমপুর থেকে আগত কাজী আলী আফতাব। নিপুন ভঙ্গিমায় তিনি কুচিপুরী নৃত্য পরিবেশন করে উপস্থিত স্রোতাদের দ্বারা অভিনন্দিত হন। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজী থালার উপরে দাঁড়িয়ে কুচিপুরি নৃত্যের বলবানি দর্শকদের উপহার দেন। নৃতি কত্থক কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা মঞ্চে নিয়ে আসে “তালিম “। তিন ভাগে ভাগ করা হয় তালিম কে – ছোটরা নাচে ত্রিতাল, মাঝের শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করেন ঝাঁপতাল আর জয়নী ভট্টাচার্য, রঞ্জিনি সরকার ও রত্নশ্রী ঘোষ উপস্থাপন করেন ধামার।এই বিভাগের প্রত্যেকের নাচ দর্শকের উচ্চ প্রশংসা লাভ করে। জয়নীর অভিব্যক্তি ও নৃত্য ভঙ্গিমা এক কথায় অসাধারণ। রঞ্জিনির নাচের মুদ্রা, হস্ত চালনা উচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে। রত্নশ্রী বয়সে ছোট হলেও নৃত্যে যথেষ্ট পরিণত। এদিনের অনুষ্ঠানের শেষে আসেন নৃতি কত্থক কেন্দ্রের অধ্যক্ষা শ্রীমতি শর্মিষ্ঠা সাহা। “সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে” রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে কত্থকের মেলবন্ধন ঘটান শর্মিষ্ঠা নৈপুণ্যের সঙ্গে।যা এক কথায় অনবদ্য।

বাইশে ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মঞ্চে আসে “অধরা প্রেম” নামক নৃত্যনাট্য নিয়ে বহরমপুরের কলাক্ষেত্র। কত্থক কেন্দ্রের কচিকাঁচা ইংরেজি ছড়ার মাধ্যমে তেহাই দেখায়” খেলার ছলে” শীর্ষক উপস্থাপনায়। নৃতি কত্থক কেন্দ্রের নিজস্ব পরিবেশনা “নারী” উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। সমাজে নারীর অবস্থান, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ, কন্যা ভ্রুণ হত্যা এবং এসবের বিরুদ্ধে নারীর প্রতিবাদ দক্ষতার সাথে তুলে ধরা হয়। প্রধান ভূমিকায় শর্মিষ্ঠা সাহা অসাধারণ। অনুষ্ঠান শেষ হয় সুশ্রী মমতা মহারাজের নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে। কত্থকের বিভিন্ন আঙ্গিক অন্যমাত্রা সাবলীলতা ও শৈলী নিয়ে উপস্থিত করেন। তার “গান্ধারী” নামক নৃত্যনাট্যে তিনি একই সঙ্গে চারটে চরিত্রের অভিনয় করে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করেন। এই তিন দিনের অনুষ্ঠানে সংগৎকার হিসেবে ছিলেন কলকাতা থেকে আগত সেতারে চন্দ্রচূড় ভট্টাচার্য, তবলায় প্রতীক মুখার্জি, এবং কন্ঠে শুভাশিস ভট্টাচার্য। এদের সঙ্গত এককথায় তিন দিনব্যাপী শাস্ত্রীয় নৃত্যের অনুষ্ঠানটিকে অন্য মাত্রা এনে দেয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *