December 22, 2024

শান্তি নিকেতন এর বসন্ত উৎসব এর টুকি টাকি

1 min read
জয়ন্ত বোস, বর্তমানের কথা।  ১৯০৭ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুরু করেছিলেন ঋতুরঙ্গ উৎসব। সেদিন শান্তিনিকেতনের প্রাণ কুঠিরের সামনে শুরু হয় এ উৎসব। এখন অবশ্য সেদিনের প্রাণকুঠি শমীন্দ্র পাঠাগার হিসেবে পরিচিত। সেই ঋতুরঙ্গ উৎসবই আজকের বসন্ত উৎসব। আগে বসন্তের যেকোনো দিন অনুষ্ঠিত হতো এ উৎসব। পরবর্তীকালে অবশ্য বসন্ত পূর্ণিমার দিনই অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব। এ উৎসব অবশ্য ঋতুরাজ বসন্তে স্বাগত জানানোর উৎসব lশান্তিনিকেতনের  প্রথম দিকের, কবির জীবদ্দশায় বসন্ত উৎসব সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যা এখানে আপনাদের জন্য কিছু কিছু অংশ তুলে ধরছি ।
 বসন্ত ঋতুটিকে ঘিরে শান্তিনিকেতন আশ্রমে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ প্রতি বৎসর ‘বসন্তোৎসব’ অনুষ্ঠানের প্রবর্তন করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল বসন্তোৎসব দেখতে এসে হাজার হাজার মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রকৃতিকে ভালবাসার সহজ পাঠ দেওয়া। এখন যেভাবে এই উৎসব পালিত হয়, আদিপর্বে তেমনটি হত না। একালের মত সেকালেও সকালেও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান হত।প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ সকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন না, বিকেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন।সকালে  দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে আম্রকুঞ্জে সঙ্গিতের আসর বসত।  গুরুদেবের বসন্ত  ঋতুর গানগুলি একটার পর একটা গাওয়া হতো। শান্তিনিকেতনের সবাই অংশগ্রহন করত। গানের আসরের পর রঙ খেলা শুরু হত।
 গুরুদেব এই আসরে থাকতেন না। অনেকে উত্তরায়নে গিয়ে গুরুদেবের পায়ে আবির ছুঁইয়ে তাঁকে প্রনাম করে আসতেন। পরে যখন ‘বসন্তোৎসব’ নাম দিয়ে অনুষ্ঠানটি চিহ্নিত  হল – সেটা ১৯৩২ সাল থেকে, রবীন্দ্রনাথ সকালের অনুষ্ঠানে আসন গ্রহন করতেন।কবি নিজেও গানে ও পাঠে অংশ নিতেন। ছাত্র ছাত্রী ও নৃত্যশিক্ষকেরা নৃত্য পরিবেশন করতেন।সকালের আনুষ্ঠানের মুল গান ও নাচ  “খোল্‌ দ্বার খোল্‌ লাগলো যে দোল”। যেসব মেয়েরা নাচত তাদের হাতে থাকতো কলাভবনের  তৈরী কচি তালপাতার ঠোঙ্গা নৌকার মত করে তৈরী। তার মধ্যে থাকত আবির আর বসন্তের ফুল (সম্ভবত পলাশ ও শিমুল)। প্রথম যুগে এই সারিবদ্ধ নৃত্যে ছেলেদের স্থান ছিলনা। পরে ছেলেদের স্থান হয়। প্রথম আমলে এত ছেলেমেয়ে ছিলনা। গানের দল মন্দিরা মৃদঙ্গবাদকসহ আগে থাকত, পরে থাকত নাচের দল।পুরবর্তীকালে নাচের দল সামনে রেখে গানের দলকে পেছনে আনা হল। অংশগ্রহনকারীর সঙ্খ্যা বেড়ে যাওয়ায়, গানের দলকে মঞ্চে বসিয়ে মাইকের সাহায্যে গান শোনানোর ব্যাবস্থা হল। এখনও সেটাই চলছে।অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে “রাঙ্গিয়ে দিয়ে যাও ” গানটি যখন গীত হয় তখন উচ্ছসিত রঙ বেরঙের আবিরে আকাশ কিছুক্ষনের জন্য আন্ধকার হয়ে যায়। মেয়েদের চোখেমুখে কেমন যেন একটা অনুমোদনের প্রশ্রয় ফুটে ওঠে। ছেলেমেয়েরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে দেয়। যিনি নিজেকে রাঙ্গিয়ে নিতে চান না তাঁকে রঙ মাখিয়ে বিব্রত না করাই এখানকার সংস্কৃতি।সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে দোল পুর্ণিমার চাঁদকে সাক্ষী রেখে কবির রচিত  কোনো   না কোনো নৃত্যনাট্য বা নাটক মঞ্চস্থ হয়।কবির তিরোধানের আগের বছর, ১৯৪০ সাল। সে বছর ২৭ মার্চ কবি শেষবারের মত সকালের বসন্তোৎসবে
উপস্থিত থাকতে পেরেছিলেন। কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে সেদিন কবি বসন্তকে আহ্বান  করেছিলেন। পরে বছর ১৯৪১ সাল ২১ফেব্রুয়ারী দোল ,অসুস্থতার  কারনে  বসন্তোৎসবে কবি উপস্থিত থাকতে পারলেন না। সেদিন কবি নিজেই “রুদ্ধ কক্ষে”  “গৃহবাসী”। আম্রকুঞ্জে তখন সমবেত কন্ঠে গান হচ্ছে “ওরে গৃহবাসী খোল্‌ দ্বার খোল্‌”। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *