নন্দীগ্রামে চলছে ভোট, পাল্লা ভারী কার দিকে?
1 min readনন্দীগ্রামে চলছে ভোট, পাল্লা ভারী কার দিকে?
রাজ্যে চলছে দ্বিতীয় দফায় ৪ জেলার ৩০ আসনে ভোট। প্রথম ৩০ হয়ে গেছে। এরপরে বাকি আরও ৬ দফা। ২৩৪ আসন। কিন্তু এই বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যই শুধু নয়, দেশের নজর পূর্ব মেদিনীপুরের একটি বিশেষ আসনের দিকে। যার নাম নন্দীগ্রাম। কারণ এখানে প্রার্থী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কারণ এখানে তাঁর লড়াই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। যিনি মাত্র ৪ মাস আগেও তৃণমূল নেত্রীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক ছিলেন। রাজ্যের একাধিক দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। আর তাই অনেকেই বলছেন, ২১০ নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে আসলে এবার গুরু-শিষ্যের লড়াই।২০২১ এর নন্দীগ্রাম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ২০০৭ এ ফিরে যেতেই হবে। কারণ তার আগে পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরের হলদি নদীর ধারে নন্দীগ্রামের অস্তিত্ব সম্পর্কে ক’জনই বা জানতেন! সদ্য ২০০৬ বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৫ আসনের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মহাকরণে ফিরে এসেছেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এই ভোটে বাম সরকারের স্লোগান ছিল, ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত্।’
সেই ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতেই নন্দীগ্রামের কৃষিজমি শিল্পের জন্য ব্যবহারের সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৭ এর ১৪ ই মার্চ। নন্দীগ্রামে একদিকে যেমন জমি আন্দোলনের শুরু, অন্যদিকে তেমনি রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে পাকাপাকি স্থান করে নিল হলদিয়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নন্দীগ্রাম। অনেকেই বলেন, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক উত্থান এবং রাজ্যে ২০১১ তে পালাবদলের অন্যতম ভিত নন্দীগ্রামের এই জমি আন্দোলন।২০১১ থেকে এখানে একচেটিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের আধিপত্য। জনপ্রতিনিধি হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিষ্ঠা পাওয়া। সিপিআইএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হওয়া। বস্তুত এতদিন পর্যন্ত নন্দীগ্রামে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও অস্তিত্বই ছিল না। ২০১৬ অর্থাত্ গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের ফলাফলের দিকে যদি একবার তাকানো যায়, তাহলেই সেই ছবি পরিস্কারভাবে ফুটে উঠবে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী শতাংশের হিসেবে ভোট পেয়েছিলেন ৬৭.২০। খাতায়-কলমে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআই এর আব্দুল কবীর শেখ শতাংশের হিসেবে ভোট পেয়েছিলেন ২৬.৭০। তৃতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির প্রার্থী বিজন কুমার দাস। শতাংশের হিসেবে ভোট পেয়েছিলেন ৫.৪০।কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আলাদা। গত ডিসেম্বরের প্রথমেই দলত্যাগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। ক্ষুব্ধ মমতা ভবানীপুর ছেড়ে এখান থেকেই প্রার্থী হবেন বলে জানিয়ে দেন। তখন থেকেই যেন রাজনৈতিক উত্তাপে ফুটছে নন্দীগ্রাম। কাঁথির ছেলে তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদান এখানকার রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই বদলে দিয়েছে।মার্চের মাঝামাঝি থেকেই বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর এসেছে এখান থেকে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, নন্দীগ্রামের ২৭০ টি বুথই স্পর্শকাতর। কড়া নিরাপত্তায় ভোট করানোর জন্য ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় সেনা পাঠাচ্ছে কমিশন। একদিকে যখন প্রচার পর্বে তৃণমূল নেত্রী আক্রান্ত হয়েছিলেন, অন্যদিকে তাঁর হুইল চেয়ারে বসে প্রচার বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়েছে।নন্দীগ্রামের রেয়াপারায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন মমতা। অন্যদিকে হলদিয়া থেকে নিজের ভোটার কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করে এই কেন্দ্রের নন্দনায়কবরের ভোটার হয়েছেন শুভেন্দু। প্রচারে তৃণমূল নেত্রী যেমন গদ্দার, মীরজাফর সহ একাধিক ‘বিশেষণে’ বিদ্ধ করেছেন শুভেন্দুকে, অন্যদিকে তৃণমূল নেত্রীকে ‘বহিরাগত’ বলছে বিজেপি। আর এর মাঝখানে রয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী, বাম ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নন্দীগ্রামে ‘কাঁটায় কাঁটায়’ টক্কর হবে।শুভেন্দু আগেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ৫০ হাজারের ব্যবধানে তিনি জিতবেন। নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ, মিঠুন চক্রবর্তী থেকে স্মৃতি ইরানি- কে আসেননি শুভেন্দুর প্রচারে। অন্যদিকে জনসংযোগের কোনও খামতি রাখেননি তৃণমূল নেত্রী। দোলের মেলা থেকে চড়া রোদে রোড শো করেছেন। আবার সিরিয়ালের চেনা মুখ থেকে জনপ্রিয় গায়ক সকলেই এসেছেন ‘দিদির দূত’ হয়ে ।বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ মিলে মীনাক্ষী ভালই ভোট কাটবেন বলে দাবি স্থানীয় বাম নেতাদের। তবে মূল লড়াই যে মমতা এবং শুভেন্দুর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হিসেব বলছে সেই ২০১১ থেকে নন্দীগ্রামের ভোট ঘাসফুলে গেছে। কিন্তু ‘ঘরের ছেলে’ এখন পদ্মফুলে। তাই সোনাচূড়া, গোকুলনগর, ভেতুরিয়া, কুলবারি, রেয়াপাড়া, টেঙ্গুয়া, বয়াল, ঘলেপুকুরের মানুষ যেন কিঞ্চিত্ দোটানায়। অনেকেই বলছেন প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটই ঠিক করে দেবে শেষ হাসি কে হাসবেন।গত ১৪ বছরে তালপাটি খাল দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ছোট্ট তেখালি ব্রিজ আরও শক্তপোক্ত হয়েছে। জননী ইঁট ভাটার প্রসঙ্গ এলেই তবু যেন থমকে যান স্থানীয়রা। ১ তারিখ তাই যেন নন্দীগ্রামেরও আরেকবার ভাগ্য পরীক্ষা।