October 24, 2024

দিন মজুরের ছেলে দক্ষিণ দিনাজপুরের পল্লব মালোর ইচ্ছা ভবিষ্যতে তাকে দৌড়বিদ হতেই হবে

1 min read

দিন মজুরের ছেলে দক্ষিণ দিনাজপুরের পল্লব মালোর ইচ্ছা ভবিষ্যতে তাকে দৌড়বিদ হতেই হবে

তপন চক্রবর্তী(উত্তর দিনাজপুর)--কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।শুধু ইচ্ছায় নয় বলা যায় পল্লব মালোর মধ্যে প্রথম থেকেই সেই প্রবল ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বড় কইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ দাস বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক কৌশিক ঘোষ এবং অতুল সরকার দেখতে পায়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও দুই ক্রীড়া শিক্ষক পল্লবকে দেখেই বুঝতে পারে এই ছেলেটির দিকে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ভবিষ্যতে সে শুধু বিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করবে তা নয় খেলার জগতে একদিন বড় কিছু একটা হলেও হতে পারে পল্লব।আর সেই থেকেই পল্লবের উপর তাদের আলাদা নজর সবসময়ের জন্য থাকে।

আসলে বড়কইল উচ্চ বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রদের মধ্যেও পল্লবের চোখের চাহুনি ও মনের অদম্য ইচ্ছা আর সব ছাত্রদের থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা ছিল। পল্লবের বাবা প্রদীপ মালো একজন দিন মজুর।বাবা ছেলের খেলাধুলার ব্যাপারে কোন খোঁজ খবর রাখতেন না।জন্মদাতা বাবা হলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ দাস এবং বিদ্যালয়ের দুই ক্রীড়া শিক্ষক যথা ক্রমে অতুল সরকার এবং কৌশিক ঘোষের নয়নের মনি ছিল পল্লব। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ দাস বিভিন্ন ভাবে পল্লবকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক সময় পড়াশোনা ও খেলাধুলার পাশাপাশি পল্লবকে বাবার সাথে দিন মজুরের কাজ করে বাবাকে সাহায্য করতে হত।।

এত আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যেও পল্লব কিন্তু তার লক্ষে ছিল অবিচল।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঠাকুরপুরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে।প্রথম থেকেই তার আথেলেটিক্সের মূল বিষয় ছিল দৌড়।প্রথম অবস্থায় ১০০,২০০,৪০০ মিটারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেও পল্লব ৮০০ মিটার দৌড়কেই সে বেছে নিয়েছে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে।দক্ষিণ দিনাজপুরের বড়কইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক কৌশিক ঘোষ এই প্রতিবেদককে বলেন পল্লবের ইচ্ছা শক্তি ছিল প্রবল। জেলা স্তরের বিদ্যালয় প্রতিযোগিতা ও ওপেন জেলা মিটে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন গ্রূপের হয়ে ৮০০মিটার দৌড়ে জেলা চ্যাম্পিয়ন হবার কৃতিত্ব অর্জন করে পল্লব।রাজ্য স্তরে ২০১৭ সালে সাই কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত ৪০০ও ৮০০মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে।কৌশিক ঘোষ আরো জানান ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাথলেটিক এসোসিয়েশন পরিচালিত রাজ্য স্তরের ৮০০ মিটার দৌড়ে ২০১৬,২০১৭,২০১৮এবং ২০১৯ সালে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঠাকুরপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দিন মজুরের ছেলে পল্লব তার স্বপ্নকে স্বার্থক করে তুলেছে রাজ্য স্তরের অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় যুগ্ম ভাবে প্রথম হবার সুবাদে।সে নুতন রেকর্ড গড়তেও সক্ষম হয় (১:৫৬-৪)। সে শুধু বিদ্যালয়ের সম্মানই বৃদ্ধি করেনি।দক্ষিণ দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের ক্রীড়া জগতের সাথে সারা রাজ্যে পল্লব মালো তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ দাস বলেন আমাদের বিদ্যালয়ের সোনার ছেলে পল্লব দারিদ্রতা কে কোন গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অফুরন্ত বিশ্বাসকে মূল মন্ত্র করে যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা আশাবাদী পল্লব আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবেই।বিদ্যালয়ের অপর ক্রীড়া শিক্ষক অখিল কুমার সরকার বলেন পল্লব ইতিমধ্যেই উড়িষ্যায় সাইয়ের ইন্ডিয়া ক্যাম্পের অনুশীলন শেষ করে বর্তমানে জলপাইগুড়িতে সাইয়ের ক্যাম্পে ২০১৮ সাল থেকে অনুশীলন করে চলছে জাতীয় স্তরে অংশগ্রহণ করবার প্রস্তুতির উদ্দেশ্য নিয়ে।আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র পল্লব মালো জাতীয় স্তরের খেলায় অংশ গ্রহন করে ওর স্বপ্ন স্বার্থক করে তুলতে বদ্ধপরিকর।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সচিব তথা সি এ বির এপেক্স কমিটির বর্তমান সদস্য গৌতম গোস্বামী এক সাক্ষাৎকারে বলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঠাকুরপুরা গ্রামের বড়কইল উচ্চ বিদ্যালয়ের এই দিনমজুরের ছেলে তথা জেলার গর্ব পল্লব মালো সবাইকে দেখিয়ে দিচ্ছে আত্ম বিশ্বাস ও পরিশ্রম করলে অনেকেই ভালো খেলোয়াড় হতে পারে আর্থিক সমস্যা কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *