এক সময় দিনাজপুরের রাজবাড়ীর কামানের গোলা ফাটিয়ে শুরু হত রধিকাপুরের উদগ্রামের দেবীর বোধন
1 min readএক সময় দিনাজপুরের রাজবাড়ীর কামানের গোলা ফাটিয়ে শুরু হত রধিকাপুরের উদগ্রামের দেবীর বোধন
তপন চক্রবর্তী,কালিয়াগঞ্জ,৫ অক্টোবর:এক সময় সাবেক পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুর রাজবাড়ীতে কামানের গোলা ফাটিয়ে সূচনা হত দুর্গাপূজার।সেই কামানের গগনভেদী শব্দ যখন এসে পৌঁছত রাধিকাপুরের উদ গ্রামের মানুষদের কানে, আর তখনই রাধিকাপুরের উদগ্রামের দুর্গাপূজার দেবীর বোধন পর্ব অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হত। আজ বর্তমান সময়ে সে সব যেন শুধুই ইতিহাস।আজ নেই রাজা,নেই কোন রাজপাট।
কিন্তূ এখন যা আছে তা বিভাজিত দুই বঙ্গের সীমান্ত চিহ্নিত করণের জন্য কাটা তারের বেড়া।ভারত বাংলাদেশ বিভাজনের পর রাধিকাপুরের এই উদ গ্রামের দুর্গা মন্দিরের নামে থাকা চল্লিশ বিঘা জমিও চলে গেছে সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে। আর বর্তমানে এপারে রয়েছে দেবী মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন তেরো বিঘা কৃষি জমি।কিন্তু তাতে করে দুই বঙ্গের বিভাজন রাধিকাপুরের উদ গ্রামের দুর্গা পূজায় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।আজ ও নিষ্ঠাভরে গ্রামবাসীদের দ্বারা উদগ্রামের মন্দিরে পূজিত হন দেবী দশভূজা।সীমান্তের কাঁটাতার বেড়াজাল তৈরী করলেও আজও এই শারদীয়া উৎসবে উদগ্রামের পূজাকে ঘিরে উদ্দীপনা রয়েছে দুই বাংলার সীমান্তের মানুষদের মধ্যে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিবছর দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিন।কথিত আছে তখনো বিভাজন হয়নি ভারত বাংলাদেশের।বিভাজিত হয়নি সাবেক দিনাজপুর জেলারও।
সে আনুমানিক পাঁচশো বছর আগেকার কথা।বাংলাদেশ ভাগের আগেই রাধিকাপুরের উদগ্রামে স্বামীর হাত ধরে এসেছিল প্রতিমা দাস।দুই বাংলা যখন এক তখন নিজের চোখে দেখেছেন রাধিকাপুরের উদগ্রামের দুর্গাপূজাকে ঘিরে দুই বঙ্গ বাসির মধ্যে কত উন্মাদনা পূজাকে ঘিরে। যে পূজাকে ঘিরে তৈরি হত সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
পূজার সময় কামানের গোলার শব্দে শুরু হওয়া উদগ্রামের পূজাকে ঘিরে এলাকার মানুষের উচ্ছাস। কিন্তু আজ দুই বঙ্গ বিভাজনে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পড়তেই কিছুটা হলেও বিঘ্নিত সেই মিলন মেলা।উদগ্রামের বর্ষীয়ান বাসিন্দা নিবারণ দাস এই প্রতিবেদককে উদগ্রামের পূজার ইতিহাস।এক সময় এই উদগ্রামেই বাস করতেন এক বৃদ্ধ ও এক বৃদ্ধা।
গাছের ডালপালা বিক্রি করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা।কিন্তু একদিন গাছের ডাল কাটার সময় পাশে থাকা একটা ইট থেকে দৈব বাণী শুনতে পান গ্রামের ঐ বৃদ্ধ।এর পর দৈববাণী মেনে সেই ইটকে তুলে এনে গ্রামের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। এর পর থেকেই দেবী পক্ষে গ্রামে শুরু হয় দুর্গা পূজা।দৈব বাণী মেনে এই মন্দিরে মহাঅষ্টমীতে এই মন্দিরে পূজা শুরু করেন এলাকার পুরোহিত।পূর্ব পুরুষদের আমল থেকেই চলা বলি প্রথা আজও চালু রয়েছে উদ গ্রামের দুর্গাপূজায়।এই পূজা দেখতে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাটা তারের ওপার থেকে যেমন অনেক ওপার বাংলার মানুষ পূজা দেখে, তেমনি রাধিকাপুরের উদ গ্রামের পূজা দেখতে এখনো শুধু কালিয়াগঞ্জ নয় উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষের ভীর হয় এই পূজাকে কেন্দ্র করে।কোন চাঁদা আদায় নয়,মন্দিরের নামে জমির ফসল বিক্রি করা অর্থেই এই পূজার খরচ মেটানো হয়ে থাকে।মহা অষ্টমীর দিন বিশাল মেলা যেন মহা মিলন মেলায় পরিণত হয় উদ গ্রামের দুর্গা পূজার মেলা।যেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড় আজও মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে থাকে।