October 27, 2024

এমএ পাশ আমিরুদ্দিনের সংসার চলে টোটোয়

1 min read

এমএ পাশ আমিরুদ্দিনের সংসার চলে টোটোয়

কালিয়াগঞ্জ শহর সংলগ্ন ভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের চিড়াইল পাড়ায় বাড়ি আমিরুদ্দিনের। পরিবারে রয়েছে চার ভাই বোন, বাবা ও মা। চরম অভাব সংসারে। শেরগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে অর্থ উপার্জনের তাগিদে একসময় পড়াশোনার ফাঁকে রাজমিস্ত্রির জোগানের কাজে নামে আমির। তবে পড়াশোনায় কোনওদিন গাফিলতি ছিল না তাঁর। উচ্চমাধ্যমিকের পর রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন আমির। পরবর্তীতে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি থেকে ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। শহরের একটি বেসরকারি ডিএলএড কলেজে ভর্তিও হয়েছিলেন আমির।

কিন্তু আর্থিক অনটনে পড়ে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এখন তাঁর ঘরে ফাইল বন্দি। চেষ্টা করেও জোটেনি সরকারি চাকরি। অগত্যা সংসারের হাল ধরতে টোটোর হাত ধরেছেন আমিরুদ্দিন। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টোটো চালান। এরপর বাড়িতে এসে খেয়ে রুটিন মাফিক দুই ঘণ্টা মোবাইলে চাকরির পড়াশোনা। তারপর খানিক ঘুম। আগামীদিনে চাকরি যে পেতেই হবে তাঁকে। সরকারি চাকরির স্বপ্ন নিয়ে এই ভাবেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বছর চব্বিশের আমিরুদ্দিন।২০২১ সালে হঠাৎ আমিরের বাবা মারা যান। পরিবার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে আমিরের কাঁধে। ঘরে বসে না থেকে এক আত্মীয়ের টোটো নিয়ে রোজগারের আশায় পথে নামেন আমির।

রাতে বাড়ি ফিরে দুঘন্টা মোবাইলে চাকরির পড়াশোনা করেন আমির। দুটো চোখই খারাপ। তারপরেও রাতে মোবাইলে এক নাগাড়ে পড়াশোনা করতে অসুবিধা হয় না?জিজ্ঞাসা করতেই আমির জানালেন, কী করব, অত দামি দামি বই কেনার মত আর্থিক সার্মথ্য আমার নেই। তাই অনলাইনে পড়াশোনা করছি। তাতে চোখের সমস্যাও হয়। কিন্তু করার কিছু নেই। বাড়িতে বসে কথা হচ্ছিল আমিরের সঙ্গে। তিনি জানান, ছোট থেকেই শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখতাম। সে স্বপ্ন আজ অথই জলে। আব্বু হাজার কষ্টের মধ্যেও আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতেন। ছোট থেকেই আব্বুকে কোনওভাবে সাহায্য করে আমি সংসার চালাতে সহযোগিতা করতাম। একবার অন্যের জমির ফসল কাটতে গিয়ে চোখে বিষাক্ত পোকা পড়ে ইনফেকশন হয়ে যায়। সে থেকেই চশমা আমার চিরসঙ্গী। বড় দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট ভাই পড়াশোনা ছেড়ে এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। বাড়িতে মা সমস্ত কাজ একা হাতেই সামলান। তাই শেষ জীবনে যাতে মা ভালোভাবে কাটাতে পারে, তাই আমরা দুই ভাই রোজগারে নেমেছি। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। এমন পরিবারের ছেলে হয়ে সরকারি চাকরি পাওয়াটা মনে হয় বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার মত। তবে কোনও মতেই হাল ছাড়তে রাজি নই আমি। আমিরুদ্দিনকে সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়ে সমিতির সভাপতি দীপা সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *