October 28, 2024

কৃষ্ণা দ্বাদশীতেই যেন দেবীপক্ষ, মমতার জয়ে তৃণমূলে বেজে উঠল শারদের আলোকমঞ্জীর

1 min read

কৃষ্ণা দ্বাদশীতেই যেন দেবীপক্ষ, মমতার জয়ে তৃণমূলে বেজে উঠল শারদের আলোকমঞ্জীর

 

দ্বাদশী তিথি। আরও তিন দিন পরে ৬ অক্টোবর অমাবস্যা তিথিতে মহালয়ার দিনে হবে পিতৃপক্ষের অবসান। বাংলায় ৭-এ শুরু দেবীপক্ষ। গোটা দেশে নবরাত্রি পর্ব।পঞ্জিকার এই সব তিথি বিশ্লেষণের পরোয়া নেই তৃণমূলে। তাদের কাছে চার দিন আগে রবিবারই এসে গেল দেবীপক্ষ। কোথায় যেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মন্ত্রিত কণ্ঠধ্বনিতে শোনা যাচ্ছে— ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর;ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা…’জিতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। পাঁচ মাস আগে বিপুল জয়ের প্রদীপ জ্বলে উঠলেও তাঁর তলায় যেন রয়ে গিয়েছিল এক চিলতে আঁধার। রবিবার সে আঁধার উবে আরও আলোকিত দীপ। বরং, তৃণমূলের অন্তরে-অন্দরে যেন বাজেছে বীরেন্দ্র বাণী— ‘প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।

 

আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।’ শাসকদলের যাঁরা সত্যিই মমতাকে মাতৃরূপে কল্পনা করেন রবিবার তাঁদের চোখে ও মনে সত্যিই তো, ‘আজ চিত্‍-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।’মমতা যে জিতবেন তা সবারই জানা ছিল। প্রতিপক্ষ বিজেপি-ও প্রচারে যা বলতে হয় তাই বললেও গণনা শুরুর আগে কোনও মন্তব্যের ঝুঁকি নেয়নি। রবিবার সকাল থেকে মমতা ক্রমশ জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েই গিয়েছেন। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার অনেক আগেই তাই নেচে উঠেছে তৃণমূল-বাংলা। গেয়ে উঠেছে আগমনী গান। কালিম্পং থেকে ক্যানিং— সর্বত্র শরতের নীল-সাদা আকাশ বারবার ঢেকে দিয়ে পড়েছে সবুজ আবিরের তাথৈ তাথৈ নাচ।একই দিনে মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরেও জয় পেয়েছে তৃণমূল। ভবানীপুরে সে অর্থে লড়াই ছিল না। নিশ্চিতই ছিল জয়। তবু একটি আসনে জয়ই তৃণমূলের কাছে যেন পাঁচ মাসের ব্যবধানে পরপর দু’দুবার বাংলা বিজয়। কারণ, বিজয়ীর নাম মমতা। বিরোধীদের হাতে থাকা ‘না-বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী’ অস্ত্র মুছে গেল। শুধু সেটাই নয়, আসলে ভবানীপুরে মমতার বড় ব্যবধানে জয় তো তৃণমূলের কাছে অনেক কিছুর জবাব।সেই জবাব দেওয়ার কাজটা শেষ। এ বার পুজো শুরু। তৃণমূলের নামজাদা নেতারা সকলেই মহানগরের বিভিন্ন নামকরা পুজোর সঙ্গে যুক্ত। সে সব পুজোর প্রস্তুতি চলতে থাকলেও ভবানীপুরে ‘বড়’ জয় নিশ্চিত করার কাজে ব্যস্ত নেতারা কেউই প্রায় মণ্ডপ তৈরিতে মন দিতে পারেননি। রবিবার পুজোর ছুটি মিলল। ততটা খ্যাতির আলোয় না থাকা বিভিন্ন জেলা থেকে ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতাদের মনও আটকে ছিল ভবানীপুরে। এ বার সবার মন উত্‍সবের উল্লাসে মেতে ওঠার ছুটি পেল। এসে গেল পুজো। পঞ্জিকা সরিয়ে শুরু হয়ে গেল মনের দেবীপক্ষ।শুধু বাংলা নয়, সারাদেশের নজর ছিল ভবানীপুর উপনির্বাচনের ফলাফলের দিকে। শেষ মুহূর্তে প্রত্যাশিতভাবেই রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে জিতলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সকাল থেকেই কালীঘাট মন্দিরের প্রবেশদ্বারের পাশে একটি পোস্টার নজর কাড়ে শহরবাসীর। যেখানে মহিষাসুরমর্দিনীর আদলে বড় বড় অক্ষরে লেখা হয়েছে, ‘মোদিশাহসুরমর্দিনী’। যা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহকে অসুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আর মমতাকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছে তৃণমূল। শুধু বাংলাতেই বিজেপিকে হারানো নয়, এই পোস্টারই বুঝিয়ে দিচ্ছে এবার দিল্লি দখলে ঝাপিয়ে পড়বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়লেও নন্দীগ্রামে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও তা নিয়ে গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তা তদন্তসাপেক্ষ, কিন্তু ওই হারের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিছুটা পালে হাওয়া পেয়েছিল। কারণ, করোনা, লকডাউন, মূল্যবৃদ্ধির জেরে বর্তমানে শক্তিশালী বিজেপির অবস্থাও এখন বেহাল। আর বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতি মুহূর্তে লড়ে যাওয়া মমতাকে হারিয়ে কিছুটা তৃপ্তি পেয়েছিল বটে, তবে তা স্থায়ী হল না। কিন্তু চেষ্টা কম করেনি বিজেপি। ভবানীপুর উপনির্বাচনের মুখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে ডেকে পাঠায় ইডি। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, আসলে ভোটের আগে তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট করাই ছিল বিজেপির মূল উদ্দেশ্য। তাতেও সফল হতে পারল না তাঁরা।২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে আগে মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরাতে চেয়েছিল বিজেপি। তা বলতে গিয়েই এদিন মমতা আরও একবার বলেন, ‘অনেক চক্রান্ত করেছিল বিজেপি। কিন্তু ভবানীপুরের মানুষ তার জবাব দিয়েছে।’ এর আগে ভোটের প্রচারে এসে মমতা দাবি করেছিলেন, ‘বি দিয়ে ভবানীপুর এবং বি দিয়ে ভারত।’ অর্থাত্‍ ভবানীপুরে জয় পাওয়া মানেই আগামী দিনে গোটা ভারতেও জয়ের গান শোনা যাবে। ভবানীপুরে সর্বকালীন রেকর্ড ভোটে জয় পেয়েছেন মমতা। তাই নতুন করে আর বলতে হয় না, এবার ২০২৪ সালে মোদি-শাহকে দিল্লির মসনদ থেকে সরানোর লড়াই আরও শক্তিশালী হল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *