October 28, 2024

বণিক সমাজের এক সওদাগর দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কুলিক নদীর ধারে রাইগঞ্জ বন্দরে প্রচলন করেছিলেন দুর্গাপূজা র

1 min read

বণিক সমাজের এক সওদাগর দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কুলিক নদীর ধারে রাইগঞ্জ বন্দরে প্রচলন করেছিলেন দুর্গাপূজার

তন্ময় চক্রবর্তী, শুভ আচার্য্য,লোকনাথ সরকার  আজ থেকে ৫০০  বছর আগে বাংলাদেশের বণিকরা বাণিজ্য করতে এসে তাদের নৌকা বা বজরা রাখতেন রায়গঞ্জের কুলিক নদীর বন্দর ঘাটে। সেই বণিক সমাজের এক সওদাগর দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কুলিক নদীর ধারে রাইগঞ্জ বন্দরে প্রচলন করেছিলেন দুর্গাপূজা র। সেই পূজা আজ রায়গঞ্জ শহরের বন্দর এলাকার বাসিন্দাদের কাছে রাইগঞ্জ আদি সর্বজনীন দুর্গাপূজা হিসেবে পরিচিত।

সাধারণ মানুষ থেকে এলাকার ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিয়ে এই পুজোর আয়োজন করে থাকেন। অধুনা বাংলাদেশের বণিক সমাজ বড় বড় নৌকা আর ভদ্রতা নিয়ে বাণিজ্য করতে এসে রাখতেন রায়গঞ্জের কুলিক বন্দর নদীর ঘাটে। কথিত আছে তারাই রায়গঞ্জ আদি সার্বজনীন দূর্গা পূজার প্রচলন করেছিলেন। এরপর পুলিশ নদীতে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দেশ ভাগ হয়ে এপার বাংলা ওপার বাংলা হয়েছে। এখন আর পুলকের জোয়ারে ভাসে না বাংলাদেশের বণিকদের বজরা।

আসেনা বাংলাদেশের বণিকরা ও। কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি বণিকদের প্রচলন করা সেই দুর্গাপূজা। এলাকার বাসিন্দা রায় চাঁদা তুলে সার্বজনীনভাবে দুর্গাপূজা করে চলছেন। রাজগঞ্জ আদি সার্বজনীন দূর্গা পূজা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা রূপেশ  সাহা জানান, তাদের সাত পূর্বপুরুষের জানতে পারেনি এই পুজোর বয়স কত। তবে এখানকার দেবী দুর্গা খুবই জাগ্রত। কমপক্ষে ৫০০  বছরের পুরনো সেই একই কাঠামোতে আজও দেবী প্রতিমা নির্মাণ করা হয়ে থাকে।

মহাষ্টমীতে হাজার হাজার ফকির ডালা পরে এই মন্দিরে।কয়েকশো বছরের পুরনো পশ্চিম দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের বন্দর আদি দুর্গা বাড়ির পুজো। রায়গঞ্জ তথা অবিভক্ত বাংলার এবং পশ্চিম দিনাজপুরের সবচেয়ে প্রাচীন এই পুজোর সূচনাকে ঘিরে লোকমুখে প্রচলিত আছে বিভিন্ন গল্পগাঁথা।‘কুলিক নদী’ ভারত-বাংলাদেশের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী।

 

একসময় এই কুলিক নদীর বুকের উপর দিয়েই চলত জলপথে সওদাগরদের বাণিজ্য আর সেই যাত্রাপথে তৎকালীন রাইগঞ্জ অধুনা রায়গঞ্জের বন্দর ঘাটে বজরা থামিয়ে ক্ষণকাল বিশ্রাম নিতেন সওদাগরেরা।কথিত আছে অধুনা বাংলাদেশের দিনাজপুর থেকে জলপথে বজরা নিয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন এক সওদাগর এবং যাত্রাপথে কুলিকের বন্দর ঘাটে বিশ্রাম নেওয়ার সময় সেই সওদাগর দেবী স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশ রক্ষা করতে ওই সওদাগর কুলিকের ঘাটে শুরু করলেন দুর্গাপূজো আর সেই থেকেই নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে কয়েকশো বছর ধরে পূজো হয়ে আসছে বন্দর আদি দুর্গা বাড়িতে।যদিও এসব ঘটনার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই তবে এ ধরনের আরও কিছু ঘটনা লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে।

 

আরেকটি প্রচলিত কাহিনী অনুসারে মহাভারতের যুগে বান রাজাদের আমলে এই পুজোর গোড়া পত্তন হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য যে বেদীতে দেবীর পুজো হয় সেই বেদী বান রাজাদের আমলে প্রচলিত ছোট্ট ছোট্ট ইট দিয়ে নির্মিত। বেদীর উপর অঙ্কিত চাঁদ ও শঙ্খের ছবিও এই সাক্ষ্যই বহন করে যে এই পূজার প্রচলন বান রাজাদের আমলে হয়েছিল, অন্তত রায়গঞ্জবাসী এমনটাই বিশ্বাস করে।আরও একটি চালু প্রবাদ অনুসারে শোনা যায়, পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে আগত এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী এই স্থানে পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘকাল তপস্যার পর দেবী দুর্গার পূজার সূচনা করেছিলেন।আজ আর কুলিক নদীর সেই নাব্যতা নেই।

বহুকাল আগেই বন্ধ হয়ে গেছে জলপথে সওদাগরদের বাণিজ্য। কিন্তু নানান গল্পগাঁথায় ঘেরা প্রাচীন এই দুর্গাপুজো আজও স্বমহিমায় বিরাজমান। পূজোর সূচনার নেপথ্যে যতই কাহিনী প্রচলিত থাকুক না কেন, রায়গঞ্জের বন্দর আদি দুর্গাবাড়ির এই পুজো বর্তমানে সার্বজনীন দুর্গাপুজোর রূপ ধারণ করেছে। অত্যন্ত জাগ্রত দেবী বলে খ্যাত দুর্গাবাড়ির দেবী দর্শনে বহু দূর-দূরান্ত থেকে নামে মানুষের ঢল। হাজারে হাজারে মানুষ আসেন এই পুজোয় অঞ্জলি দিয়ে পুজোর ভোগ গ্রহণ করবার জন্য। অভীষ্ট পূরণের লক্ষ্যে আসা হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে এই পুজো হয়ে ওঠে আরও জীবন্ত।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *