October 28, 2024

জিতেন্দ্র বেকায়দায় ফেললেন নবান্নকে, ওই দুটো কথাই অমিত শাহর কাজে লাগতে পারে

1 min read

জিতেন্দ্র বেকায়দায় ফেললেন নবান্নকে, ওই দুটো কথাই অমিত শাহর কাজে লাগতে পারে

সোমবার সকালে আসানসোলের পুর প্রশাসক ও বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির লেখা একটি ‘গোপন’ চিঠি ফাঁস হয়েছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে লেখা ওই চিঠিতে জিতেন্দ্র বলেছেন, কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার কোটি কোটি টাকা স্রেফ ‘রাজনৈতিক কারণে’ আসানসোলকে নিতে দেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার ওই টাকা দেবে বলেছিল তা দেয়নি। এর পর ববি-জিতেন্দ্র চাপানউতোর চলেছে। ববি বলেছেন, ‘বিজেপি হয়তো ভুল বোঝাচ্ছে।’ জিতেন্দ্র পাল্টা বলেছেন, ‘ববি হাকিমকে কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বোঝাচ্ছেন! এ সব হাল্কা কথা কেন বলছেন!’ ইত্যাদি ইত্যাদি। জিতেন্দ্রর চিঠির ওই দু’টি শব্দের তুলনায় বাকি কথা হয়তো সত্যিই হাল্কা। এবং সেই দু’টি শব্দ হল—’রাজনৈতিক কারণে’।

কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্প শুধু বাংলায় বাস্তবায়িত হয়নি এমন নয়। সেই তালিকা দীর্ঘ। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা বরাবরই বলেন, রাজনৈতিক কারণেই মমতা দিদি কেন্দ্রের অনেক প্রকল্প বাংলায় বাস্তবায়িত হতে দেন না। পাছে দিল্লি ক্রেডিট পেয়ে যায়। তাতে দুর্ভোগ হচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষের বা একেবারে গরিব, প্রান্তিক লোকজনের। এমনকি বিজেপি এও দাবি করে, এই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রায়ই বলেন ‘সব করে দিয়েছি’, সেটা আদতে স্রেফ ভাঁওতা। অনেকে মনে করছেন, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার যে স্রেফ রাজনৈতিক কারণে দিল্লির প্রকল্প আটকে দিয়েছেন, বিজেপির এই অভিযোগ দল ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে কার্যত সত্যি প্রমাণ করে দিলেন জিতেন্দ্র। তাঁকে উদ্ধৃত করেই, এ বার সে কথার বলার সুযোগ পেয়ে যেতে পারে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদীর প্রথম জমানায় স্মার্ট সিটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল।

তবে তা বাংলায় বাস্তবায়িত না হওয়ায় খুব বেশি চাপানউতোর হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রের আয়ুষ্মান যোজনা ও কিষাণ সম্মান যোজনা বাংলায় বাস্তবায়িত না হওয়ায় অবশ্যই রাজনৈতিক সংঘাতের পরিস্থিতি হয়েছে। উনিশের ভোটের সময়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, বাংলায় স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প রয়েছে। তার আওতায় রাজ্যের মানুষ ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পান। বাংলার প্রকল্প টুকলি করেছে মোদী সরকার। কিন্তু বিজেপির বক্তব্য, আয়ুষ্মান যোজনা বাংলায় বাস্তবায়িত না হওয়ায় যে গরিব মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে। সেদিন মিথ্যে কথা বলেছিল রাজ্যের সরকার। বাংলার গরিব, প্রান্তিক মানুষের সবাই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা পেতেন না। এখন, ভোটের দোর গোড়ায় পৌঁছে স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড বানানো শুরু হয়েছে। অথচ আয়ুষ্মান যোজনা চালু হলে, বাংলার মানুষের এই ভোগান্তি হত না। অনেকেই এত দিনে বিমার সুবিধা পেতেন। একই ভাবে কিষাণ সম্মান যোজনার আওতায় বছরে কৃষকদের ৬ হাজার টাকা করে দেয় কেন্দ্র। কিন্তু সেই যোজনাও বাংলায় চালু হয়নি। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নিজস্ব প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু বিজেপি তথা কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজ্যের প্রকল্প থাকুক না। কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু ২ বছরে বাংলার চাষীরা কেন্দ্রের ১২ হাজার টাকা থেকে যে বঞ্চিত হলেন সেই হিসেব কে দেবে! এখানেই শেষ নয়, করোনা সংক্রমণের কারণে দেশে যখন লকডাউন চলছে তখন পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য একটি প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্র। বলা হয়েছিল, কোনও জেলায় ২৫ হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এলে সেই জেলা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। কিন্তু কেন্দ্রের অভিযোগ, বাংলার সরকার কোনও জেলারই নাম পাঠায়নি। রাজ্য সরকার তথা নবান্নর অবশ্য এ সব ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্র স্মার্ট সিটি বা আয়ুষ্মান যোজনার মতো প্রকল্প খাতে পুরো টাকা দেয় না। একটা অংশ কেন্দ্র দেয়, বাকি অংশ রাজ্য দেয়। সুতরাং রাজ্যের যেখানে অংশীদারিত্ব থাকবে সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ণ করে নরেন্দ্র মোদী শুধু নিজের ছবি লাগাবেন, তা করতে দেব না। বাংলা নিজেই সে সব করে নেবে। সম্প্রতি অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছেন, আয়ুষ্মান ভারত বা কিষাণ সম্মান প্রকল্পের টাকা রাজ্যের সরকারকে দেওয়া হোক। রাজ্য সেই টাকা খরচ করবে তথা কৃষকদের কাছে পাঠাবে। তার কোনও জবাব দিল্লি দেয়নি। তবে কদিন আগে কলকাতায় এসে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, কৃষকদের নয় আমাকে টাকা দাও। তার মানে… কাটমানি, কাটমানি, কাটমানি।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *