October 28, 2024

কাটমানি নিয়ে তুলোধনা করলেন নাড্ডা

1 min read

কাটমানি নিয়ে তুলোধনা করলেন নাড্ডা

সর্বভারতীয় বিজেপির বর্তমান প্রজন্মে জগত্‍প্রকাশ নাড্ডা মোটামুটি ভাবে নরম প্রকৃতির নেতা বলেই অনেকে মনে করেন। আস্তে কথা বলেন, স্বভাবগত ভাবে উগ্র নন। ব্যক্তিগত সম্পর্কে তাঁর সৌজন্যের তারিফ করেন বিরোধীরাও। কিন্তু যে জেপি নাড্ডাকে বৃহস্পতিবার ডায়মন্ডহারবারের মঞ্চে দেখা গেল, তাতে তিনি দৃশ্যত উত্তেজিত। রাগে, ক্ষোভে কাঁপছেন। এবং এই প্রথম বুঝি কোনও রাজনৈতিক মঞ্চে এতটা আগ্রাসী দেখা গেল সর্বভারতীয় বিজেপির বর্তমান সভাপতিকে। বাংলায় গুন্ডারাজ, অপশাসন নিয়ে তৃণমূল সরকারকে একদিকে যেমন চাঁচাছোলা আক্রমণ করেছেন নাড্ডা, তেমনই দুর্নীতির প্রশ্নে তুলোধনা করে বলেছেন, ‘দিল্লি থেকে মোদী সরকার টাকা পাঠায়। কিন্তু সেই টাকা আপনাদের কাছে পৌঁছয় না।

কারণ, আপনাদের ঘটিতে ফুটো করে দিয়েছেন মমতাজি। সেই ফুটো থেকে কাটমানি হয়ে সব গলে বেরিয়ে যাচ্ছে!’ নিউটাউনের হোটেল থেকে বেরিয়ে বিজেপি সভাপতি ও তাঁর সঙ্গে দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বৃহস্পতিবার কিভাবে ডায়মন্ডহারবারে পৌঁছেছেন তা কার্যত গোটা বাংলা দেখেছে। আধলা ইট, লাঠির মার আছড়ে পড়েছে তাঁদের গাড়িতে। নাড্ডার গাড়ি বুলেট প্রুফ বলে কাচ ভাঙেনি। কিন্তু হেন কোনও নেতা নেই যাঁর গাড়িতে ভাঙচুর হয়নি। ডায়মন্ডহারবারের মঞ্চে যখন বক্তৃতা দিচ্ছেন বিজেপি সভাপতি, তখন দেখা যায় মঞ্চের এক কোণায় বসে কনুইয়ে বরফ ঘষছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে নাড্ডা বলেন, ‘আজ স্রেফ মা দুর্গার কৃপায় এখানে পৌঁছেছি। তৃণমূলের ক্যাডার, গুন্ডাবাহিনী আমাকে আটকানোর কোনও চেষ্টা বাদ দেয়নি। যে দৃশ্য আজ দেখলাম, তাতে বলা যায় বাংলায় আইনের শাসন বলে কিছু নেই। অসহিষ্ণুতার শিখরে পৌঁছে গেছে।’ বিজেপি সভাপতির কথায়, বিরোধীদের মারধর করে দমন করার এই চেষ্টাকেই পরাস্ত করতে হবে সামনের ভোটে। এদের পতন অনিবার্য। নাড্ডার এই কথার জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূলের দুই প্রবীণ নেতা দু’রকম মন্তব্য করেছেন। সৌগত রায় বলেছেন, ‘বিজেপি সভাপতির কী দরকার ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রে গিয়ে খোঁচানোর!’ আর পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ‘বিজেপি নেতারা গাড়ির মধ্যে থেকে প্ররোচনা দিয়েছেন।’ বিজেপি সভাপতির কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ার পর সুব্রতবাবু বলেছেন, ‘দলের কর্মীদের অনুরোধ করব ওদের থেকে দূরে থাকতে।’ ইদানীং কালে বিজেপিকে দু’টি বিষয়ে আঘাত করতে চাইছে তৃণমূল। এক, বিজেপি বহিরাগত। দুই, বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি জানে না। এদিন নাড্ডা বলেন, আমি মমতাজিকে দেখে অবাক হচ্ছি। বিরোধীদের তুইতোকারি করে আক্রমণ করছেন। আমি জানতে চাইছি, এটা কি বাংলার সংস্কৃতি? এ সবের পরেই দুর্নীতি প্রশ্নে বর্তমান সরকার ও শাসক দলের সমালোচনা করেন বিজেপি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এখানে আছে চাল চোর আর ত্রিপল চোর। রেশনের চাল লুঠ হয়েছে, সেই চাল পাওয়া গিয়েছে তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে। আবার তা নিয়ে হাইকোর্ট অডিট করার নির্দেশ দেওয়ায় তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, মমতাজি ভয় পেয়েছেন। যদি চুরি ধরা পড়ে যায়!’ নাড্ডার কথায়, ‘কেন্দ্র কৃষকদের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা করে পাঠাচ্ছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাও আটকে দিয়েছেন। বলছেন, কৃষকদের নয়, আমাকে দাও। ‘মানে কাটমানি, কাটমানি, কাটমানি…’ ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়িয়েও এদিন তাঁর বক্তৃতায় সরাসরি স্থানীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মুখে আনেননি বিজেপি সভাপতি। তবে বলেন, ‘এখান থেকেই লোকসভায় সাংসদ ছিলেন জ্যোতির্ময় বসু। তাঁর প্রজ্ঞা, সংসদীয় রাজনীতিতে অবদান ছিল অসামান্য। কিন্তু এখন যে সাংসদ রয়েছেন, তিনি পার্লামেন্টেই যান না। তা হলেই বুঝুন।’ এদিন নাড্ডার কনভয়ের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের মতে, তিনি অফিসারদের বলেছেন, রাজ্যের থেকে এ ব্যাপারে কৈফিয়ত চাইতে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এ সব রিপোর্ট চাওয়াচাওয়িতে বিশেষ কিছু হয়তো হবে না। তবে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক তিক্ততা যে শিখরে পৌঁছে গেল তা নিয়ে সন্দেহের হয়তো অবকাশ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *