October 28, 2024

আরো এক নক্ষত্রের পতন, চিরবিদায় নিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

1 min read

আরো এক নক্ষত্রের পতন, চিরবিদায় নিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

১৫ নভেম্বর, রবিবার। জয়ন্ত বোস,কালিয়াগঞ্জ, উঃ দিনাজপুর  বাংলা চলচ্চিত্রে এক যুগের অবসান। টালিগঞ্জের মহীরুহ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর নেই। খিদ্দা সমস্ত ফাইটিং স্পিরিট দিয়ে লড়েছিলেন গত ৪০ দিন ধরে, তবে শেষমেষ হেরে গেলেন। আজ দুপুর ১২.১৫ মিনিটে কলকাতার বেলেভিউ হাসপাতালে প্রয়াত হলেন কিংবদন্তী অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। উত্তম সমসাময়িক যুগেও বাঙালির মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন সৌমিত্র। ছয় দশকের দীর্ঘ তাঁর চলচ্চিত্র জীবন।

অভিনয় ছিল তাঁর জীবনের অক্সিজেন, বলতেন, ‘আমি অভিনয় করছি বলেই তো সুস্থ আছি।’ তাই তো করোনা সতর্কাতার মাঝেও লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। লডকাউন পরবর্তী সময়ে শেষ করেছেন নিজের বায়োপিক অভিযান-এর শ্যুটিং। কাজ করেছেন একটি ডকুমেন্ট্রারি ফিল্মেও। সৌমিত্র বলতেন ‘কাজ ছাড়া আমি আর কিচ্ছু করতে চাই না।’ ১৯৩৫ সালে কৃষ্ণনগরে জন্ম সৌমিত্রবাবুর। বাবা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের উকিল ছিলেন। তবে নাটকের চর্চা নিয়মিত ছিল পরিবারে,বাবা নাটকের দলে অভিনয় করতেন। ছোট থেকেই সেই পরিবেশে বড় হওয়া তাঁর।

তখন থেকেই অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান সৌমিত্র। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স(বাংলা) পাশ করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দু-বছর পড়াশোনা করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতার রুপোলি সফর শুরু হয়, ১৯৫৯ সালে। ছবির নাম অপুর সংসার, যা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সেই পথচলা শুরু এই জুটির। সত্যজিৎ পরিচালিত ৩৪টি ছবির ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যা বাংলা চলচ্চিত্রের পরম ও বিরল প্রাপ্তি।তবে শুধু সত্যজিৎ রায় নন, তপন সিনহা, মৃণাল সেন, অজয় কর, তরুণ মজুমদার থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষ, সুমন ঘোষের মতো আজকের প্রজন্মের পরিচালকদের ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৬১ বছরের দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে প্রায় ৩০০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়, নাট্য পরিচালনা ও নাট্য রচনাতেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে তিনি সফল হন। আজীবন তাঁর এই মঞ্চপ্রীতি বজায় ছিল। নাটক নিয়ে নিত্যনতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেও বিশেষ দক্ষ ছিলেন নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ির অনুসারী এই অভিনেতা। আবার সাহিত্য জগতেও ছিল তাঁর অনায়াস পদচারণ। তাঁর এ যাবৎ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ডজন ছাপিয়ে গিয়েছে। ছবি আঁকাতেও প্রবল আগ্রহ ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। গত ৫ অক্টোবর অভিনেতার কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরের দিন হাসপাতালে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দু-সপ্তাহে করোনা মুক্ত হলেও, কোভিড পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন সৌমিত্রবাবু। গত তিনদিন তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি মারাত্মক বিগড়ে যায়। কোনওরকম চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিত্সকরা। অবশেষে সব লড়াইয়ে ইতি… তবে যতদিন বাংলা সিনেমা থাকবে, বাঙালি থাকবে ততদিন বাঙালির মনে চিরকাল বেঁচে থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুটে কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো বাঙালির হৃদয়ে অন্তঃস্থলের নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *