পানীয় জলপ্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি দশ বছরেও
1 min readপানীয় জলপ্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি দশ বছরেও
শহরের প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের মধ্যে মাত্র ২৫০০ পরিবারে এখনও পর্যন্ত পানীয় জল পৌঁছে দিতে পেরেছে পুরসভা। যা মোট পরিবারের দশ শতাংশ। এই নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে জল কিনে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। এই অবস্থায় বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত পুরসভার ১০০ কোটি টাকার পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শেষ করা হোক এবং প্রতি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হোক।
কিন্তু ওই খাতে রাজ্যের তরফে কোনও অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় পুরসভা বাড়ি বাড়ি ওই জল পৌঁছানোর কাজ কবে শেষ করবে তা কেউ বলতে পারছেন না। কেটে গিয়েছে দশ বছর। কিন্তু এখনও বালুরঘাট পুরসভার প্রস্তাবিত জল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এমনিতেই পানীয় জলের চাহিদা রয়েছে। তার উপর করোনা পরিস্থিতিতে বারবার হাত ধোয়ার কারণে বেড়ে গিয়েছে জলের ব্যবহার। কিন্তু বালুরঘাট পুরসভা গত দশ বছরেও শহরে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পারেনি।জল সংযোগের কাজ ধীরগতিতে চলায় ক্ষুব্ধ পুরসভার বিদায়ি তৃণমূল বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাজেন শীল ও বাম বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস।পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে বাম পরিচালিত পুরবোর্ড পুর এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে। এজন্য কেন্দ্রের কাছে ৪২ কোটি টাকা চেয়ে পাঠায়। ২০১১ সালে টাকাও বরাদ্দ হয়। পরের দুবছর এই প্রকল্পের কাজ এগোতে না এগোতেই বোর্ড চলে যায় তৃণমূলের হাতে। এরপর তৃণমূল কংগ্রেস জোরকদমে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। বালুরঘাটের ট্রাক টার্মিনাসে জলের রিজার্ভার ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হয়। আত্রেয়ী নদী থেকে জল তোলার জন্য পাম্প মেশিন বসানো হয়েছে। শহরের ২৫টি ওয়ার্ডে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়। ধীরগতিতে এই প্রকল্পের কাজ চলার ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের খরচ ৪২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়।ওই বোর্ডের সময় পুর এলাকার প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের মধ্যে মাত্র ২১০০ পরিবার জল চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। তৎকালীন পুরবোর্ড টাকা ধার্য করলেও, মাত্র শতাধিক বাড়িতেই জলের সংযোগ দিতে পেরেছিল। তবে বিনা পয়সায় বাড়িতে জলের সংযোগ দিতে সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসক পরিচালিত পুরবোর্ড। গত তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের ধার্য করা টাকা ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণার পাশাপাশি নতুন করে আবেদন জমা নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে পুরবোর্ড। এমনকি যাঁরা জলের জন্য আবেদন করে টাকা জমা করেছিলেন, সেই টাকাও ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৫০০ পরিবারেই জলের সংযোগ দিতে পেরেছে বালুরঘাট পুর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে অধিকাংশ মানুষই জল না পেয়ে পানীয় জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন।বালুরঘাট পুরসভার বাম বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস বলেন, আমরা ২০১৩ সালে বোর্ড থেকে সরে গিয়েছিলাম। তার আগেই জল প্রকল্পের কাজ প্রায় জোর আকার নিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল পাঁচ বছর থাকার সময় সেই কাজ ধীরগতিতে চালিয়েছে। এখন পুর প্রশাসকরাও কাজে গতি আনেননি। শহরের ১০০ শতাংশ বাড়িতে কবে জল পৌঁছাবে তা বলা মুশকিল। তবে জল প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে মানতে চাননি পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমা শাসক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, অভিযোগ ঠিক নয়। পুরসভার জল প্রকল্পের কাজ ঠিকমতোই চলছে। তবে জলের সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ কোটি টাকা প্রয়োজন রয়েছে। যা রাজ্যের কাছে চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা আজও পাওয়া যায়নি বলে সমস্ত বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ওই অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেই ১০০ শতাংশ বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা হবে।