রোদ ও বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে বিধাননগরের আনারস
1 min readরোদ ও বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে বিধাননগরের আনারস
এমনিতেই টানা লকডাউনে শিলিগুড়ি মহকুমার বিধাননগরের আনারস দিল্লি ছাড়া বাইরের রাজ্যে পাঠানো যায়নি। এমনকী শিলিগুড়ির বাজারেও আসেনি। জুন মাসে আনলক পর্বে বাজারঘাট খোলে। কিন্তু তারপর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় বাজারে সেভাবে আনারস নিয়ে আসা যায়নি। দু’দিন ধরে আবহাওয়া পরিবর্তন হলেও কড়া রোদ উঠতেই আনারস পেকে এবার পচতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় লোকসানের বহর বাড়ছে চাষিদের। বাধ্য হয়ে যে আনারস খোলাবাজারে ৪০ টাকা জোড়া বিক্রি হতো, সেটা এখন ২০ টাকাতেও কেউ কিনতে চাইছেন না।আনারস চাষিরা বলেন, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে খেতে জল জমে যায়। এতে গাছের গোড়ার মাটি আলগা হয়ে গাছ হেলে যায়। সোমবার থেকে কড়া রোদের জেরে ফল পুড়ে যাচ্ছে।
এদিকে সময়ের আগে অনেকের বাগানের ফল পাকতে শুরু করেছে। কিছু আনারস পচনও ধরেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগে কলকাতায় পিকআপ ভ্যানে ২ হাজার আনারস রপ্তানি করলে প্রায় ৪ হাজার টাকা পরিবহণ খরচ পড়ত। কিন্তু এবার তা বেড়ে ১২ হাজার টাকা হয়েছে। এতে আনারসের সঠিক মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিধাননগরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়। সব মিলিয়ে তিনলক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনারস চাষের সঙ্গে যুক্ত। বিধাননগরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার আনারস চাষি আছেন। গতবছরও এখন থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার আনারস রপ্তানি করা হয়েছিল। চাষি সুবীর ঘোষ, অজিত দাস বলেন, লকডাউনের সময়ে স্থানীয় বাজারে কিছু আনারস বিক্রি করেছি। বাধ্য হয়ে তখন কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। পরবর্তীতে লকডাউন শিথিল হতেই আশার আলো দেখি। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে নদী সংলগ্ন আনারস বাগান ডুবে যায়। এতে প্রচুর ফল নষ্ট হয়ে যায়। এখন চড়া রোদে ফলে পচন ধরেছে। আমরা এবার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখে পড়লাম। চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি আনারস গাছ তৈরি করতে প্রায় ১৩ টাকা খরচ হয়। মরশুমে এই ফল পাইকারি বাজারে ৮-১০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়। বিধাননগরের আড়তদার কমল সিংহ বলেন, টানা লকডাউনে চাষিরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েন। গাড়ি না পাওয়ায় পাইকাররা আনারস কিনতে পরেননি। যাঁরা মাঝেমধ্যে গদিতে আনারস এনেছিলেন, তাঁরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করে দেন। এটা আনারসের মরশুম। এই সময়ে পিস প্রতি প্রায় ২৮ টাকা পাইকারি দামে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু এবার মাত্র ১০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতবছরও আমি প্রায় দেড় কোটি টাকার ব্যবসা করেছিলাম। ১৫০ গাড়ি আনারস রপ্তানি করেছিলাম। এবার কাঁচা আনারস পাঠাতে না পেরে পাকা ফল বিক্রি করছি। বিধাননগর পাইনঅ্যাপেল প্রোডিউসার সংগঠনের সভাপতি বাদল সরকার বলেন, করোনার কারণে এবার আনারস রপ্তানিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তার উপর জ্বলানির মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহণ খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এতে আনারসের সঠিক দাম পাওয়া যাচ্ছে না। আগে মরশুমে এখান থেকে দিল্লিতে ৩০-৩৫ ট্রাক আনারস যেত। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে মাত্র দুই ট্রাক আনারস দিল্লিতে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, বিহার, কলকাতা এমনকী নেপালে রপ্তানি করা যায়নি।