December 25, 2024

নিছক দলগত জয়-পরাজয় নয়। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল ভারতীয় রাজনীতির একঝাঁক বাঁক-বদলের মাইলফলক হয়ে রইল বিজেপির কাছে 

1 min read

নিছক দলগত জয়-পরাজয় নয়। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল ভারতীয় রাজনীতির একঝাঁক বাঁক-বদলের মাইলফলক হয়ে রইল বিজেপির কাছে 

 নিছক দলগত জয়-পরাজয় নয়। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল ভারতীয় রাজনীতির একঝাঁক বাঁক-বদলের মাইলফলক হয়ে রইল। কী কী? ১) প্রশ্ন উঠে গেল গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বক্ষমতা নিয়ে। পাঁচ রাজ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ল কংগ্রেস। ২) আবির্ভাবের প্রায় ৩০ বছর পর অস্তমিত হলেন দলিত রাজনীতির রোলমডেল মায়াবতী। ৩) বিজেপি পেল যোগী আদিত্যনাথ নামে নতুন পোস্টার বয়। ৪) পাঞ্জাবে শক্তিশালী প্রতিটি দলকে পরাস্ত করে বিপুল জয়ের মিরাকল ঘটালেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির সীমানা পেরিয়ে এবার জাতীয় রাজনীতির শক্তিশালী এক ফ্যাক্টর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিলেন। এবং সর্বোপরি ৫) উত্তরপ্রদেশ হয়ে গেল দ্বিমুখী লড়াইয়ের ময়দান। বহুজন সমাজ পার্টি এবং কংগ্রেসের রাজনীতি উত্তরপ্রদেশ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রত্যাখ্যাত হল। আগামী দিনের তাবৎ নির্বাচনী যুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের রণক্ষেত্রে দু‌ই প্রতিপক্ষ হবেন ৪৮ বছরের অখিলেশ যাদব এবং ৪৯ বছরের যোগী আদিত্যনাথই। পাঁচ রাজ্যের ভোটযুদ্ধে বিজেপি একাই চার রাজ্যে সরকার গড়ছে। সবথেকে চমকপ্রদ জয় উত্তরপ্রদেশ। এই রাজ্যে একক গরিষ্ঠতা পেরিয়ে  বিজেপি-জোটের বিপুল আসনে জয়ী হওয়ার আভাস এক্সিট পোল দিয়েছিল। সেই পূর্বাভাসের বাস্তবায়ন ঘটেছে। যদিও ২০১৭ সালের তুলনায় বিজেপি জোটের আসন কমেছে কমবেশি ৬০টি। পক্ষান্তরে, ২০১৭ সালে মোদি ঝড়ে উড়ে গিয়ে মাত্র ৪৭টি আসন পাওয়া সমাজবাদী পার্টি আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১২৪ স্পর্শ করেছে। একে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ লড়াই হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। যাদব ও মুসলিম ভোটের কম্বিনেশন অখিলেশ যাদব আদায় করে নিলেও এই ফল থেকেই স্পষ্ট যে, বিজেপি ও মায়াবতীর দলিত ভোটব্যাঙ্কে তিনি বিশেষ ফাটল ধরাতে পারেননি।

মায়াবতীর দলিত ভোটের বড় অংশই বিজেপির ঝুলিতে এসেছে। উত্তরপ্রদেশে রেকর্ড গড়লেন যোগী আদিত্যনাথ। ১৯৮৫ সালের পর আর কোনও শাসক দল এই রাজ্যে দ্বিতীয়বার সরকার গড়তে পারেনি। যোগী সেই মিথ ভাঙলেন। কিন্তু কেন এই জয় তাৎপর্যপূর্ণ? কারণ, কৃষক আন্দোলন, করোনায় গঙ্গায় লাশ ভেসে যাওয়া, বেকারত্ব, উন্নাও থেকে হাতরাস, নারী নির্যাতন—কিছুই প্রভাব ফেলেনি বিজেপির জয়যাত্রায়। অন্যদিকে, গোয়া, উত্তরাখণ্ড এবং মণিপুরেও সরকার ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি, যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির কাছে এই ফলাফল বড়সড় অক্সিজেন। মোদি ম্যাজিক যে অক্ষুণ্ণ, সেই প্রচারই প্রতিষ্ঠা পেল কংগ্রেসের ব্যর্থতার দৌলতে। কারণ, লক্ষণীয়ভাবে, এই তিন রাজ্যেই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। সাম্প্রতিক তাবৎ নির্বাচনী প্রবণতা থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারতের যেখানেই ভোটযুদ্ধে কংগ্রেসকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপি পেয়েছে, সেখানেই জয়ের পথ হয়েছে মসৃণ। রাজ্যে রাজ্যে গেরুয়া শিবিরকে আটকাতে দফায় দফায় ব্যর্থ হচ্ছে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস। ২০২১ সালে বাংলা, কেরল, তামিলনাড়ু আটকে দিয়েছিল বিজেপিকে। প্রতিপক্ষ ছিল তৃণমূল, সিপিএম এবং ডিএমকে।

বিজেপি কোন কোন রাজ্যে জয়ী হয়েছিল? অসম ও পুদুচেরি। কারা ছিল প্রতিপক্ষ? কংগ্রেস। এবারও গোয়া, উত্তরাখণ্ড, মণিপুরে বিজেপির সরকারে থাকা সত্ত্বেও সরকার বিরোধী হাওয়া তুলতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। অর্থাৎ, দেশজুড়ে আঞ্চলিক দলের কাছেই বারংবার প্রতিরোধের মুখে পড়ছে বিজেপি। ওড়িশা থেকে পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু থেকে ঝাড়খণ্ড, দিল্লি থেকে পাঞ্জাব। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল দিল্লিরই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে পাঞ্জাবে। ১১৭টি আসনের মধ্যে ৯২টি আসন একা পেয়েছে তারা, যা রেকর্ড। নভজ্যোৎ সিং সিধু, মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নি, ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং অথবা অকালি রাজনীতির পিতামহ ভীষ্ম প্রকাশ সিং বাদল—প্রত্যেক হেভিওয়েটকে হারিয়েছেন আম আদমি পার্টির অজানা-অচেনা সাধারণ প্রার্থীরা। উল্টোদিকে, পাঞ্জাবে ভোটের আগে নানাবিধ এক্সপেরিমেন্ট করে দলকে ডুবিয়ে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। হাতে রইল রাজস্থান ও ছত্তিশগড়। আগামী বছর ভোট। সেই দুই রাজ্যেও বিজেপি বনাম কংগ্রেসই দ্বৈরথ হবে। ওই সবেধন নীলমণি দুই রাজ্যও রাহুল গান্ধীর হাতছাড়া হলে কী হবে? কংগ্রেস-মুক্ত ভারত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *