টাটকা খেজুরের গুড় নিয়ে আসুন কালিয়াগঞ্জ এর কুণোড় থেকে
1 min readটাটকা খেজুরের গুড় নিয়ে আসুন কালিয়াগঞ্জ এর কুণোড় থেকে
পিয়া গুপ্তা চক্রবর্তী উত্তর দিনাজপুর শীত শুরু হলেই বাঙালির জিভে খেজুর রসের স্বাদ আনাগোনা করে। বিশেষ অতিথির আসনও অধিকার করে বসে এই লোভনীয় রস ও গুড়। এ সময়ে খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে মুখরোচক রস। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা যেন এসব ছাড়া জমেই না। শীত ও খেজুর রস যেন একে-অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু রসই নয়, গুড় আর পাটালির জন্য দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে এর স্বাদ-গন্ধ নিতে। এ সময় শহরে থাকা আত্মীয়স্বজনদের সমাগম ঘটে গ্রামের বাড়িতে। রসের পিঠা-পায়েস খাওয়াই এর প্রধান উদ্দেশ্য।বাংলার গ্রামে আতিথেয়তায় সকালে মুড়ি সহযোগে খেজুর রস দিয়ে প্রাতরাশের প্রচলন আজও আছে। তবে শীতের সকালে বাজারে হাঁড়ি নিয়ে রস ব্যবসায়ী বসে আছেন এমনটা আজকাল দেখাই যায় না। এর কারণ, খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাব। অথচ পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠে-পুলি তৈরির জন্য খেজুর রস ও গুড়ের প্রয়োজনীয়তা এখনও প্রশ্নাতীত।
খেজুরের রস ও গুড় ছাড়া শীতের পিঠা যেন অপ্রকৃত ব্যাপার! সকালে গাছ থেকে নামানো কাঁচা রসের স্বাদ যেমন বর্ণনায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তেমনি জ্বাল দেওয়া রসের তৈরি বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ও চাহিদাও অনেক। কুয়াশামাখা সকালবেলা রসের তৈরি পায়েসের গন্ধে মৌ মৌ করে চারিদিক। তাই পৌষমাস এলেই খেজুর রস ও গুড়ের চাহিদা বাড়তে থাকে।
নলেন গুড় থেকে তৈরি হয় নলেন গুড়ের সন্দেশ, ক্ষীর-পায়েস। এই গুড় দিয়ে নানারকম পিঠা তৈরি করা হয় গ্রামে। ভাপা, সিদ্ধপুলি, রসের চিতইয়ের মতো হরেক রকমের পিঠা। আর এই পিঠা বানানোকে ঘিরে শিশু-বৃদ্ধার বসে থাকার দৃশ্য বাংলার এক পুরনো সংস্কৃতিরই অংশ। মনে হয় শীত যত বেশি, তাদের পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি, আনন্দ তত বেশি।
আশ্বিনের শেষের দিকে গাছিরা খেজুরগাছকে প্রস্তুত করতে থাকেন রস আহরণের জন্য। গাছের বাকল কেটে চেঁছে ‘কপাল তোলা’ হয় তারপর নলি বসানো হয়। যেখান থেকে নলির মাধ্যমে রসের হাড়িতে নেমে আসবে রস। একেকজন সুদক্ষ প্রশিক্ষিত গাছি কোমরে মোটা দড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে গাছ কাটে। শীতের সকালে সূর্য ওঠার আগেই গাছিরা গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কুয়াশাঘেরা সকালে গাছিদের কাঁধে করে হাঁড়ি ভরা রস নিয়ে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য গ্রামীণ বাংলাদেশ ছাড়া আর পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। এ ছবি মনে করিয়ে দেয় রঙ-তুলিতে আঁকা শিল্পীর এক মনোরম চিত্রকর্মের কথা।হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় উত্তর দিনাজপুর জেলায় এখন শীতের আমেজ চলছে।শীত মৌসুম শুরুরসঙ্গে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে জেলার প্রত্যন্তঅঞ্চলের মানুষ।শুরু হয়েছে শীতের মধু- খেজুর রস আহরণ।এই রস আহরণে গাছিরা এখন যাবতীয়প্রস্তুতি নিচ্ছে।এ মৌসুমে আবহমান বাংলায় খেজুর রস আহরণ খেজুর গুড় একটি প্রাচীন ঐতিহ্য ।আর খেজুর রসেরপিঠা পায়েস বাংলার উপাদেয় খাদ্য তালিকায় এখনও জনপ্রিয়।বছরজুড়ে অযত্ন আর অবহেলায়পড়ে থাকলেও শীতকালে চাষিদের কাছে খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়।কারণ এ গাছ থেকেই আহরিতহয় সুমিষ্ট রস।আর এ রস জ্বালিয়ে ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়।খেজুরের গুড়থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো।যার মৌতানো স্বাদ ও ঘ্রাণ সর্ম্পূণভিন্ন।
খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রসদেবে।শীতের সকালে খেজুর রস পান শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দেয়।খেজুর রস আহরণ আর তারথেকে বিভিন্ন উপাদেয় খাদ্য তৈরি আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অনুষঙ্গ।খেজুরের নলেন গুড়ছাড়া শীত মৌসুমের পিঠা খাওয়া জমেনা।শীতের পুরো মৌসুম জুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি, পায়েস খাওয়ারপালা।আর কিছুদিন পর নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবেগ্রাম-বাংলা।প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা সমাগত।বাঙালির এ সময়ের অন্যতম আকর্ষণখেজুর গুড়ের পিঠা-পায়েশ।প্রাচীনকাল থেকেই খেজুর গুড়ের জন্য গ্রাম বাংলাবিখ্যাত।দিন বদলের সঙ্গে মানুষের জীবন-যাত্রায় অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলায়নিখেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড়-পাটালি তৈরির পদ্ধতি।
চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে মাটির ভাঁড়ে (কলসি) রাতভর রস সংগ্রহ করা হয়।সূর্য ওঠার আগেই তা আবার গাছ থেকে নামিয়ে আনে তারা।পরে এই রস মাটির হাঁড়িতে কিংবা টিনের তৈরি কড়াইয়ে জ্বালিয়ে তৈরি করে গুড়-পাটালি।ইতিমধ্যে জেলার নানান জায়গায় শুরু হয়েছে গুড়-পাটালি তৈরির সেই প্রক্রিয়া।গাছিরা এখন কাজের ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। অল্প দিনের মধ্যেইবাজারে পাওয়া যাবে নতুন খেজুর গুড়।গ্রামে গ্রামে পড়ে যাবে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা, পায়েশসহ নানা মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম।শীতের আগমনী বার্তা গ্রামবাংলায় নিয়ে আসে নানা রকমসুস্বাদু খাবারের সমাহার।বিভিন্ন রকমের খাবারের মধ্যে গ্রামবাংলায় শীতের প্রধান অনুষঙ্গ সুস্বাদু খেজুরের রস।সেই রসে তৈরি পাটালি গুড় আর শীতের রকমারি পিঠাপুলি সবার মন ভরিয়ে দেয়।লোভনীয় খেজুর রসের জোগান দিতে এখন থেকেই ব্যস্ত গাছিরা।চলছেখেজুর গাছ চাছা-ছোলার কাজ।সেসব গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দল বেঁধে গাছিরা খেজুর গাছ পরিষ্কারের কাজ করছেন।মরশুমের শুরুতেই বাজারে পাটালি গুড় ও খেজুর রস ওঠেগাছিদের আগাম গাছ ঝোড়ার কারণে।
বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কোমরে মোটা রশিবেঁধে ঝুলে ঝুলে খেজুর গাছ ঝুড়ে মাথায় চাঁচ দিচ্ছেন। এই গ্রামের খেজুর রস ওপাটালির সুনাম আছে।মৌমাছি যেমন মধুরখোঁজে ছুটে বেড়ায় এক স্থান থেকে অন্যত্র, ঠিক তেমনি শীত পড়তেই মৌমাছির মতো খেজুর রসের সন্ধানে এক জায়গা থেকে অন্যজায়গায় বেড়াচ্ছে একদল গুড় শিল্পী। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, শীত পড়তে না পড়তেই খেজুর রস সংগ্রহ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন উত্তর দিনাজপুরজেলার কালিয়াগঞ্জের কুনোরের হাট পাড়া এলাকার গুড় শিল্পীরা। শীত এলেই পিঠে-পায়েসের প্রেমী বাঙালীর জিভে জল যায় আর বিভিন্ন ধরনের খেজুর গুড়ের লোভনীয় মিষ্টান্য তো আছেই।এই পিঠে বা পায়েস তৈরির খেজুর গুড় থাকবে না তা কক্ষনও ভাবাই যায় না। তাই শীতকালএলেই খেজুর গুড়ের প্রচুর চাহিদা থাকে জেলা জুরে। সেই চাহিদা মেটাতে খেজুর রস সংগ্রহ করতে ও গুড় বানাতে ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। পৌষ মাসে শীতের মরশুমে এলাকার খেজুর গাছ বেছে নিয়েছেন গুড় তৈরীর কারিগরেরা। সেই গাছ থেকে প্রতি গাছ ১০০ থেকে ১২০ টাকা চুক্তির ভিত্তিতে গাছনিয়েছেন গুড় তৈরীর কারিগরেরা। সেই গাছ থেকে ভোর রাত থেকেই চলে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরীর কাজ।গুড় তৈরীর কারিগর গৌর চন্দ্র সরকার জানান কনকনে শীতের ঠাণ্ডায় গাছের ডগায় উঠে গাছ থেকে রস নামানোর পর দিনভর চলে গুড় তৈরির কাজ। রস সংগ্রহের পরে পরিবারের সকলে হাত লাগায় গুড় তৈরীর কাজে। পিছিয়ে থাকে না বাড়ি বাড়ির মহিলারাও। গোধূলি বেলা পর্যন্ত চলে এই গুড় তৈরির কাজ।