October 30, 2024

আমাদের স্টপেজ বাঁশবেড়িয়া

1 min read

প্রীতম সাঁতরাঃ দূর কোনো পাহাড়, জঙ্গল বা সী বীচ নয়। আমাদের যাত্রা ট্রেনে করে ,মাত্র দু ঘন্টার রাস্তা ; কাটোয়া লাইনে। গঙ্গাতীরে অবস্থিত এই স্থান শিল্প প্রেমীদের কাছে যেমন নমস্য তেমনি ইতিহাস প্রেমীদের কাছেও। না আর বেশী হেঁয়ালি করবো না।

আমাদের স্টপেজ বাঁশবেড়িয়া। হংসেশ্বরী আর অনন্ত বাসুদেব মন্দির এখানকার মূল আকর্ষণ। তবে এখানকার ইতিহাস জানা থাকলে তো কোনো কথাই নেই, বেশ ভালো করেই উপভোগ করতে পারবেন। টেরাকোটার নয়নাভিরাম

         ছবি ঃ- প্রীতম সাঁতরাঃ

কারুকার্য , নিম কাষ্ঠের ওপর দক্ষ শিল্পীর কাজ হয়তো লেন্স বন্দী করা যাবে ঠিকই, তবে তৎকালীন সময়ের গুরুত্ব, পৃষ্ঠপোষকদের গল্প থেকে যাবে ওই পোড়া মাটির ইঁটের প্রতিটি পাঁজরে। আসুন খুব সংক্ষপে আপনাদের বলি ছুটকি, মহামায়া, নৃসিংহদেবের কথা।
‘ রাজা -মশাই ‘ বহুকাল হল রাজবাটীতে পা মাড়াননি। রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে হয়েছেন কাশীবাসী। রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে দরকার নগদ সাত লক্ষ রৌপ্যমুদ্রা। নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন স্বপ্ন চরিতার্থ করতে। শেষমেষ বড়বউ মহামায়া নিজের সমস্ত গহনা বেচে দিলেন। সাত লক্ষ হল। কাশী থেকে ফিরে এলেন নৃসিংহদেব। লক্ষ মুদ্রার বিনিময়ে সাত সাতটি নৌকায় নিয়ে এসেছেন চুনা পাথর। রাজ্য পুনরুদ্ধার নয়, নিজের মা-এর স্মৃতিতে তৈরি করবেন এক মন্দির। হংসেশ্বরী মন্দির। প্রপিতামহ প্রতিষ্ঠিত অনন্ত বাসুদেব মন্দির দেখেছেন তিনি। দেখেছেন বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরে পোড়ামাটির মন্দির কিভাবে ক্ষয় পায়। তাই তিনি গড়বেন মায়ের দীর্ঘমেয়াদি মন্দির। জীবিতবস্থায় সম্পূর্ণ স্থাপত্য দেখা হয়নি রাজা -মশাইয়ের। তাঁর ফেলে রাখা অপূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন ছোটবউ শঙ্করী সেই ১৮১৪ সালে। মহারাজা অন্যত্র থাকাকালীন নিয়মিত করতেন যোগ সাধনা, কিছু সময় যুক্ত ছিলেন এক তান্ত্রিক গোষ্ঠীতে। এর প্রভাব দেখা গেছে মন্দির নির্মাণেও। সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় ‘যোগা ‘ এবং ‘ প্রণয়ম ‘ তত্ত্ব। এমতাবস্থায় এক রাতে তিনি স্বপ্নে প্রতক্ষ্য করেন দেবী হংসেশ্বরীর অনন্য রূপ। আশীর্বাদরত মুদ্রায় কৃষ্ণ বর্ণা চুর্তভুজা অধিষ্ঠিতা ছিলেন এক প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর। মৃণাল দন্ড নির্গত হয়েছে নীচে শায়িত মহাদেবের নাভিদেশ থেকে। স্বপ্নাদেশ অনুসারে নিম কাঠ দিয়ে তৈরী করেন মাতৃ মূর্তি। এই সবকিছুই এখনো রয়েছে। রাজবাড়ির লোকজনের বদলে মন্দির বর্তমানে আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হাতে। পন্ডিত এবং কবি আ্যালেকজান্ডার চ্যাপম্যান লিখেছেন :

                                                                               ছবি ঃ- প্রীতম সাঁতরাঃ

” রচিলা মন্দির এক: আজও উচ্চশির, ভিতরে বাইরে ভুমে আজও গম্ভীর, … “
বয়সের ভারে ভেঙে গিয়েছে রাজবাড়ির অনেকটাই। এখন দুর গঙ্গায় দেখা মেলে না পালতোলা মহাজনি নৌকার। রাজবাড়ির পাতে পড়ে না জনাইয়ের মনোহরা, ধনেখালির খইচুর, ‘গুঁফো সন্দেশ ‘। রয়ে গেছে শুধু টেরাকোটার কারুকার্যখচিত বাসুদেব মন্দির
আর মাতৃ শক্তির প্রতীক হংসেশ্বরী মন্দির।
তাহলে চলুননা একদিন যাওয়া যাক বাঁশবেড়িয়া। সঙ্গে অবশ্যই একটা ক্যামেরা নিয়ে আসবেন কিন্তু। এবার নিশ্চয় যেতে ইচ্ছা করছে। করাটাই স্বাভাবিক। তাহলে পড়ে নিন কি ভাবে যাবেন-
হাওড়ে থেকে কাটোয়া লোকাল। সারাদিনই ট্রেন পরিষেবা মিলবে, তবে চেষ্টা করুন সকাল আটটার ট্রেনটা ধরার। বাঁশবেড়িয়া স্টেশন থেকে বেড়িয়েই মিলবে টোটো। 10 টাকায় আপনাকে পৌঁছে দেবে মন্দিরে। ফেরা একই ভাবে।
সারাদিন ঘোরার পর এবার কিছু খেতে হবে।

                                                                       ছবি ঃ- প্রীতম সাঁতরাঃ
তাই স্টেশন সংলগ্ন দু -একটি খাওয়ার সাধারণ মানের দোকান রয়েছে। খাবার আর জলের বোতল সঙ্গে নেওয়াই যাওয়াই ভালো। ভিড় এড়াতে কোনো উপলক্ষে না যাওয়াই ভালো।
থাকা : পুরোটা ঘুরতে কয়েক ঘন্টা লাগে। থাকার তেমন জায়গা নেই।
আশা করি এবার আপনারা ঠিক সময় করে টুক করে ঘুরে আসবেন এই ঐতিহাসিক স্থান।আর হ্যাঁ,ঘুরে আসার পর আমাদের জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগলো। তাই ঝটপট বেরিয়ে পড়ুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *