কালিয়াগঞ্জ এর উন্নয়নে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম কার্তিক চন্দ্র পাল।

তনময় চক্রবর্তী সামনে বিধানসভার ভোট ও পুরসভার ভোট আসছে। এই সময় দাঁড়িয়ে প্রত্যেক দলের নেতা-নেত্রীরা আবারো কালিয়াগঞ্জ এর উন্নয়নে হাজারো প্রতিশ্রুতি দিবে। এটাই গণতন্ত্রে প্রচলিত নিয়ম। আবার এটাও নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে যেই ক্ষমতায় চলে আসুক না কেন তারপর সেই রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি গুলো অনেকাংশেই ভুলে গিয়ে নিজেরাই আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই ভাবেই কালের নিয়মে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া কালিয়াগঞ্জ শহর আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও পিছিয়ে পড়া শহরের তকমাই ছিল। একটা সময় কালিয়াগঞ্জ শহরকে বলা হত নেতা তৈরীর কারখানা। এই পবিত্র ভূমি থেকে তাবড় তাবড় রাজনীতিবিদরা জনপ্রতিনিধি হয়ে কি লোকসভায় কি পৌরসভায় কি বিধানসভায় গিয়েছে। অনেকে আবার এখান থেকে জয়ী হয়ে মন্ত্রী ও হয়েছেন। আর তখন তারা নিজেদের কে হাম কিসিসে কম নেহি বলে দিনের পর দিন সিংহাসনে বসে রাজত্ব চালিয়েছিল।

কিন্তু তাদের একটিবারের জন্যও মনে হয়নি যে এই পুণ্যভূমি কালিয়াগঞ্জ এর জন্য তাদের কিছু করার আছে। তারা ভুলে গিয়েছিল কালিয়াগঞ্জ এর সন্তান তারা। এইভাবে গত ৩০ বছর ধরে কালিয়াগঞ্জ শহর ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়েছিল আর পাঁচটা জায়গার তুলনায়। কিন্তু কালিয়াগঞ্জ নিবাসীদের আর্তনাদ ছিল প্রত্যেক দলেরই জনপ্রতিনিধিদের কাছে আপনারা এই শহরের জন্য কিছু করুন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সেই শহরবাসীর আর্তনাদ দীর্ঘদিন ধরে শুধু আর্তনাদে থেকে গিয়েছিল। ছিটেফোটাও সাধারণ মানুষের চিৎকার তারা শুনতে পাননি। গত ২৩ শে মে ২০১৫ সালে শেষবারের মতো কালিয়াগঞ্জ এর পৌরপতি নির্বাচিত হন জাতীয় কংগ্রেসের কালিয়াগঞ্জ এর ১৫ নং ওয়ার্ডের কমিশনার প্রয়াত অরুন দে সরকার।

সেই সময় পৌরভোটে ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে জাতীয় কংগ্রেস ১৫ টি আসন দখল করে । বিজেপি পায় একটি আসন ও সিপিএম পায় একটি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে তৎকালীন পৌরপতি র নেতৃত্বে ভালোভাবেই সংসার চালাচ্ছিল কালিয়াগঞ্জ এর জাতীয় কংগ্রেস। কিন্তু তারপরে হঠাৎ যেন বজ্রপাত হয়ে গেল কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা য়। কংগ্রেসের বজ্র আসনের বেষ্টনীতে ভেদ করে কংগ্রেসের সেই সুখের সংসার থেকে বেরিয়ে গেলেন কালিয়াগঞ্জ শহরের ৮ নং ওয়ার্ডের কমিশনার কার্তিক চন্দ্র পাল। শুধু তিনি একা নন তিনি তার সাথে বেশ কয়েকজন কমিশনারদের কেও তার সহযাত্রী করলেন। অর্থাৎ জাতীয় কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের তারা সবাই যোগ দিলো। একেবারে ফুটবলের ময়দানে দলবদল এর মতন করেই এ যেন দলবদল হয়ে গেল এক সিম থেকে আরেক শিবিরের। কার্যত সেই সময় শহরে একটি আসন না পেয়েও দারুন উল্লাসে ফেটে পড়েছিল তৎকালীন কালিয়াগঞ্জ এর তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

এরপর পৌরসভায় কার্তিক চন্দ্র পালের নেতৃত্বে অনাস্থা নিয়ে আসলেন অরুন দে সরকার সেই অনাস্থা তে হেরে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে সেই সময় জাতীয় কংগ্রেসের ২৫ বছর ধরে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপতি প্রয়াত অরুন দে সরকারকে গদিচ্যুত হতে হয়। পাশাপাশি সেই গদি সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা র নতুন পৌরপতি হিসেবে শপথ নেন কার্তিক চন্দ্র পাল। আর তখন শহরের মানুষরা প্রচন্ড সংসারের মধ্যে পড়ে গিয়ে ভেবেছিলেন এভাবেই কি চলতে থাকবে কালিয়াগঞ্জ এর ভবিষ্যৎ। তখন সাধারন মানুষরা মনে মনে একটা কথা ভাবছিলেন যে নেতারা এভাবে জনগণের ভোট নিয়ে জনগণের সাথে ছিনিমিনি খেলবে ?

আখেরে কালিয়াগঞ্জ বাঁশির কোন লাভ হচ্ছে না শুধু নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তৈরি করতেই ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর সেই সময় পৌরপতি হিসেবে শপথ নিয়ে কালিয়াগঞ্জ বাসীর কাছে প্রাক্তন পৌরপতি কার্তিক চন্দ্র পাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি মানুষের হয়ে কাজ করবেন, কালিয়াগঞ্জ এর উন্নতির জন্য কাজ করবেন। এই ক্ষেত্রে কোনো কিছুকে আপস করা হবে না। আর সেই জন্যই তিনি জাতীয় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই ছিল সেই সময় কার্তিক বাবু র বক্তব্য সাধারণ মানুষের প্রতি। কিন্তু না সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণাকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা যেদিন থেকে কার্তিক চন্দ্র পাল রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় পৌরপতি হিসেবে ওসিন হয়ে কাজ শুরু করেছিলেন সেদিন থেকেই পিছিয়ে পড়া শহরের তকমা ধীরে ধীরে ঘুচতে থাকে। পৌরসভার উদ্যোগে সেই সময় দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকে উন্নয়নের এক্সপ্রেস।

একদিকে যেমন তৈরি হয়েছে কালিয়াগঞ্জ বাঁশির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আধুনিক মানের বাস স্ট্যান্ড, তেমনি যানজট এড়ানোর জন্য তৈরি হচ্ছে ট্রাক স্ট্যান্ড, পীর পুকুর থেকে কুনোর মোড় পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ এর পাশাপাশি রাস্তায় ডিভাইডারের মাঝখান দিয়ে এলইডি আলোর ব্যবস্থা যেমন তার পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জ শহরের হাসপাতাল পাড়ায় আধুনিক মানের একটি বিনোদন পার্ক যা এখন পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। যে পার্ক ইতিমধ্যে সকলের মনের দাগ কেটে নিয়েছে। তেমনি প্রাক্তন পৌরপতি কার্তিক চন্দ্র পালের আমলেই তৈরি হয়েছে কালিয়াগঞ্জ এর মজলিশপুর এ প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক মানের একটি শ্মশান ঘাট। এর পাশাপাশি তার আমলে হাসপাতাল রোডের উন্নত মানের রাস্তার পাশাপাশি রাস্তার দুই ধার দিয়ে ৪২ টি আলোকস্তম্ভ লাগিয়ে আলোয় আলোকিত করে প্রাক্তন পৌরপতি দেখিয়ে দিয়েছে শহরবাসীকে যে কারো অদম্য ইচ্ছা কাজ করার যদি মানসিকতা থাকে তাহলে কোন সমস্যাই যে বাধা হয়ে দাড়ায় না। জানা যায় হাসপাতাল রোডের আলোকসজ্জা তৈরি করতে মোট ব্যয় হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা ।

শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি শহর কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যার স্বপ্ন ছিল দুচোখে সেই চোখ দিয়ে তিনি উপলব্ধ করতে পেরে শহরের মধ্যমণি বলে পরিচিত মহেন্দ্রগঞ্জ নাটমন্দিরের সংস্কার করে তিনি একটি দ্বিতীয় বৃন্দাবন ধাম কালিয়াগঞ্জ বাসিকে উপহার দিয়েছেন। যা সাধারণ মানুষরা প্রতিদিনই খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছে। তবে এই কাজে তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর আন্তরিক প্রচেষ্টা।

 

ফলে শহরবাসীর উন্নয়নে যে সমস্ত কাজ গুলো প্রাক্তন পৌরপতি কার্তিক চন্দ্র পাল করে গিয়েছেন সেগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে ইতিমধ্যে গেঁথে গিয়েছে। এর পাশাপাশি শহরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা কে আরো আধুনিক মানের করে তোলার জন্য শহরের চারদিকে হাইড্রেন এর যেমন ব্যবস্থা তিনি করেছেন তেমনি অলিগলিতে কোন রাস্তাঘাটে খারাপ না থাকে সেই রাস্তার ও আমূল সংস্কার এবং কোথাও যদি নতুন রাস্তা তৈরি করতে হয় সেটাও তিনি করে দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয় সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার সামনে যে একটি আধুনিক মানের গেট তৈরি হয়েছে সেটিও তার ই প্রচেষ্টায়। পাশাপাশি বর্তমানে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা সংস্কার হচ্ছে নতুন করে সেটিও তারি উদ্যোগে অনুমোদন হয়েছে। যার কাজ চলছে এখন দ্রুত গতিতে।

সব মিলে কালিয়াগঞ্জ এর উন্নয়নে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম যে কাত্তিক পাল সেটা নিন্দুকেরাও এখন বলছেন কালিয়াগঞ্জ শহরের দিকে দিকে।কালিয়াগঞ্জ এর উন্নয়নে কেমন কাজ করেছে প্রাক্তন পৌরপতি কার্তিক চন্দ্র পাল এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কালিয়াগঞ্জ এর বিজেপির মন্ডল সভাপতি ভবানী চরণ সিংহ বলেন, কার্তিক বাবু অদম্য প্রচেষ্টা এবং কাজ করার মানসিকতা নিয়ে

তিনি যেভাবে শহরের উন্নয়নে কাজ করে গিয়েছেন তাতে আজ নিন্দুকেরাও বলতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি শহরের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। কালিয়াগঞ্জ এর সিপিআইএম নেতা ভারতে চৌধুরী বলেন, কালিয়াগঞ্জ শহরের উন্নয়নে যে কাজগুলো হয়েছে খুবই ভালো। এইভাবে চলতে থাকলে কালিয়াগঞ্জ এর ই অগ্রগতি হবে। অপরদিকে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা র প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তথা সিপিআইএম নেতা জ্ঞানেন্দ্র শংকর মজুমদার বলেন, কালিয়াগঞ্জ শহরের উন্নয়নে যেভাবে কাজ করেছে প্রাক্তন পৌরপতি কার্তিক চন্দ্র পাল তা যথেষ্ট প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে সে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *