করোনা ভাইরাস- কি করে মোকাবিলা করছে গ্রামীণ ভারত
1 min readকরোনা ভাইরাস- কি করে মোকাবিলা করছে গ্রামীণ ভারত
তুহিন শুভ্র মন্ডল ” প্রতিরোধ চিকিৎসার চাইতে ভাল” ।এই আপ্তবাক্য স্বতঃসিদ্ধ।অর্থাৎ ” prevention is better than cure”।তাতে অনেক বিপদ ঠেকানো যায়।এই কথাটা এখন বারে বারে মনে হচ্ছে।কারণ করোনা ভাইরাস।এক অদৃশ্য ভাইরাস যা কিনা ধনী, দরিদ্র মানছে না।উন্নত, উন্নয়নশীল, অনুন্নত দেশ মানছে না।তার বিপদ বা ভয় গ্রাস করছে সবাইকে।চীন থেকে শুরু করে, ইতালি, ইংল্যান্ড,স্পেন, গ্রীস হয়ে ভারতবর্ষেও থাবা বসিয়েছে।করোনার মোকাবিলায় ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী চোদ্দ এপ্রিল অবধি লকডাউন ঘোষনা করেছেন।যা কিনা কার্ফিউয়ের মতো করেই দেখা হবে।পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রাণপাত করছেন।স্বাস্থ্য দপ্তর, পুলিশপ্রশাসন, সাধারণ প্রশাসন, স্বাস্থ্যকর্মী, লক ডাউনের আগে পর্যন্ত সমাজবন্ধু সংগঠন ও অন্যান্য অসংখ্য কর্মী, মানুষ করোনা মোকাবিলায় শহরে গ্রামে সচেতনতা অভিযান চালিয়েছেন।মাইকিং হয়েছে।স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে গ্রিভেন্স রিড্রেসাল সেল খোলা হয়েছে।খোলা হয়েছে ফ্লু সেন্টার।দক্ষিণ দিনাজপুরও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।বরং তৎপর।কিন্ত তারপরেও কেমন আছে গ্রামীণ ভারত? করোনা মোকাবিলা গ্রামীন ভারত কিভাবে করছে একটু দেখে নেওয়া যাক।এক্ষেত্রে যদিও দক্ষিণ দিনাজপুরের গ্রামীন এলাকার এক অংশ বিশেষের কথা তুলে ধরবো।গত 22 মার্চ প্রধানমন্ত্রীর ডাকে প্রথম জনতা কারফিউ হয়েছিল।তারপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাতাশে মার্চ অবধি রাজ্যে লক ডাউন ঘোষনা করলেন মূখ্যমন্ত্রী।রাজ্যে করোনা আক্রান্ত একজন মারাও গিয়েছেন।গতকাল প্রধানমন্ত্রী আগামীচোদ্দ এপ্রিল অবধি সমগ্র দেশে ঘোষনা করেছেন লক ডাউন।
মানুষ কেমন মানছে? বিশেষত গ্রামের।সমস্ত প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে গিয়েছিলাম দেখতে খরাইল, বান্নাপাড়া, নক্সা,চক্রাম, ভাটপাড়াইত্যাদি গ্রামীণ এলাকায়।প্রথমেই দেখা হল ষাটোর্ধ্ব বিশু টুডু আর তার স্ত্রী শুকুরমনি মার্ডির সাথে।ভ্যানে করে জমি থেকে মাটি নিয়ে যেতে এসেছেন।ঘরের জন্য না নিলেই নয়।আজ ঠিক না করলে ঘর ভেঙে যাবে।একটা রোগ এসেছে জানেন?প্রথমে ভাইরা বলেও পরক্ষণেই ভাইরাস বললেন।বললেন অন্য একটা কারণে গতকালই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন।দেখেছেন ডাক্তার সবাইকে দূরে দূরে বসিয়েছেন।মুখ ঢাকেননি কেন? বলতেই বললেন ঢাকাই ছিল এতক্ষণ।বলেই একটা বাড়তি লুঙ্গি যেটা সঙ্গে ছিল মুখ ঢেকে নিলেন।ওনার স্ত্রী শুকুরমনি মার্ডির মুখে গামছা ছিলই।ভাল করে ঢেকে নিলেন।দু একটি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা বলতেই বললেন তারা সবসময়ই গরম জল খান।তারপর মাটি কাটা হয়ে
যেতেই বাড়ির পথ ধরলেন।তবে বিশু টুডু আর শুকুরমনির চিত্রই সব নয়।গ্রামের জমিতে আলু গাছের পরিচর্যা করছিলেন বছর চল্লিশের শ্যামল কর্মকার।মুখে নেই মাস্ক।ধর্মতলায় আড্ডা দিচ্ছিলেন একজন বয়স্ক ও দু’জন যুবক।একজনের মুখে আলগোছে একটা গামছা।বাকিদের বালাই নেই।দু- একটি কথা বলতেই সরে গেলেন বিভিন্ন দিকে।রাস্তা দিয়ে তরুণের দল সাইকেল চালিয়ে শহর থেকেই ফিরছে।এক দুজনের মুখে মাস্ক।বাকিদের নেই।একটা দোকান পেলাম ।জিনিসপত্র কিনছে মানুষ।একটি বাচ্চাওআছে।এত জন একসাথে কেন? মাস্ক কোথায়? বলতেই এক তরুণ পকেট থেকে মাস্ক বের করে মুখে দিলেন।ঐ দূরে গ্রামের ক্ষেতে দেখা যাচ্ছে মানুষ।বালুরঘাটের পাশে ভাটপাড়া হোক বা কুশমন্ডির রামপুর।মানুষ বাইরে আসছে নানান অছিলায়।তপনের শিবতলাতে গুজরাট থেকে আজ সকালে কোনওভাবে এসেছেন বাড়িতে ।হোম আইসোলেশনে থাকার কথা কিছুতেই তাকে বোঝানো যাচ্ছিল না।জানিয়েছিলেন পরিবেশ কর্মী পিয়ালী রায়।পরে অবশ্য সে হাসপাতালে গিয়েছে বলে খবর। দক্ষিন দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই জেলার হাট গুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।তা সত্ত্বেও দাঁড়ালহাট রমরমিয়ে চলেছে।ছিল প্রচুর মানুষের ভীড়।গতকাল রাতেও ছিল গ্রামীন এলাকা গুলোতে মানুষের জটলা, চায়ের দোকানে আড্ডা।কেমন যেন গা ছাড়া মনোভাব।যেন করোনা তাদের স্পর্শ করবে না।এত সচেতনতার প্রচার সত্ত্বেও যেন তাদের ঘুম ভাঙছে না।তাদের মোকাবিলায় পুলিশকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে।
শহরেও এই চিত্র।আজ বালুরঘাট শহরের রাস্তায় নেমে অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণব কুমার ঘোষ, সদর মহকুমাশাসক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, পুলিশকে সাথে নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন।প্রধান রাস্তা গুলিতে না হলেও।অলিতে গলিতে, বাজারের মধ্যে মানুষের ভীড় চোখে পরছে।খাবার মজুত করে রাখার একটা ভাবনাও কাজ করছে।যার পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্কও কাজ করছে মানুষের মধ্যে। পুলিশ কড়া অবস্থান নিয়েছে এক্ষেত্রে।লক ডাউনকে অমান্য করায় গ্রামীণ এলাকা কুমারগঞ্জের ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।এদিকে আজ অবধি দক্ষিণ দিনাজপুরে হোম কোয়ারান্টাইনের সংখ্যা ছিল 6223জন।ফ্লু সেন্টার গুলোতে 1174 জন গিয়েছেন।আইসোলেশনে একজনও ভর্তি নন।সমাজকর্মীরা বলছেন যেহেতু এই বিপর্যয়ের বিষয়টা অন্যরকম।তাই দল বেঁধে গিয়ে সচেতনতা করা যাচ্ছেনা।তবুও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।প্রশ্ন হচ্ছে এই যে এত জরুরীকালীন অবস্থা তাতে মানুষ এখনও কেন এত উদাসীন।শহুরে ভারত বিশেষ করে গ্রামীণ ভারত।পারবে তো দক্ষিন দিনাজপুর,পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ মোকাবিলা করতে? গ্রামীণ ভারতের অংশই যে বেশি।বিশেষ করে যেখানে ভিন রাজ্যে কাজ করে গ্রামে গ্রামে ফিরে আসা শ্রমিক, মজুরেরসংখ্যা অসংখ্য।যারা নিজেদের অসুস্থতা গোপন করছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে যেতে অস্বীকার করছেন।পাড়ার এমনকি বাড়ির লোকের কথাও শুনছেন না।