বাঁশের কাজ ছেড়ে পরিচারিকার কাজ করছেন অনেকেই রায়গঞ্জের কোতগ্রামে
1 min readবাঁশের কাজ ছেড়ে পরিচারিকার কাজ করছেন অনেকেই রায়গঞ্জের কোতগ্রামে
শুভজিৎ দাস দুই দিন বাদে ছট পূজা। তাই রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জের কোতগ্রামের ব্যস্ততা তুঙ্গে।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বাঁশের ডালি ও কুলো বানানোর কাজ।বাড়ির মহিলা ও পুরুষেরা সারা বছরই বাঁশের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেন।তবে পূজা আসলেই ডালা ও কুলো বানানোর তোড়জোড় লেগে যায়।তবে পরিশ্রম অনুযায়ী দাম না মেলায় অনেক মহিলা শিল্পী বাঁশের কাজ ছেড়ে মানুষের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নিয়েছেন। পুরুষেরা শহরে এসে অন্য কোনো কাজ করে পেটের ভাত জোগাড় করছেন।শিল্পীরা যথেষ্ট হতাশ।এক সময় যাদের একমাত্র পেশা ছিল বাঁশের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে মেলা ও বাজারগুলিতে বিক্রি করে রুটি ও রুজির ব্যবস্থা করা,আজ তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ এই পেশা ছেড়ে অন্য কাজ নিয়েছেন।তাদের অভিযোগ, পাইকার ও মহাজনেদের থেকে দাম মিলছে না।যে কুলো ও ডালা বাজারে ৫০ টাকা ও ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে,আজ তারা সেই ডালা বা কুলোর দাম পাচ্ছে ২৫ টাকা ও ৪০ টাকা।বাঁশের দাম উঠলেও পরিশ্রমের ন্যায্য মজুরি মিলছে না।অন্য কিছু করার উপায় না থাকায়,আবার অনেকে বাধ্য হয়ে এই কাজ করছেন।এদিন দুপুরে সুভাষগঞ্জের কোতগ্রামে গিয়ে দেখা গেল,বেশ কিছু পরিবার বাঁশের ডালা ও কুলো তৈরিতে ব্যস্ত।বৃদ্ধ থেকে মহিলা ও পুরুষ কুলো বুনছেন।কোতগ্রামের একটি শাল বাগানে ঝুপড়িতে থাকেন প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ মঙ্গল দাস।বাড়ি পাশে হলেও তিনি ওই ঝুপড়িতেই থাকেন।
প্রায় ৪০ বছর ধরে বাঁশের কাজ করেন।আগে ভ্যান চালিয়ে হাটে হাটে গিয়ে ডালা, কুলো সহ অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করলেও এখন আর পারেন না।তবে এখন সারা বছর বাঁশের কিছু সামগ্রী বানান।বৌমা সেই সামগ্রীগুলি পাইকারদের দিয়ে আসেন। বয়সের ভারে সেভাবে কাজ করতে না পারলেওছট পূজা আসতেই অন্যদের মতো মঙ্গলবাবুও ব্যস্ত। তিনি বলেন,সারাদিন এই কাজ করলেও পেটের ভাত জোটে না।তবুও করে যেতে হচ্ছে।কারন ডালা বা কুলো ২৫ টাকার বেশি দিতে চায় না পাইকাররা। সরকারী ভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করলে এত কষ্ট হতো না।আমরা যারা শিল্পী তারা এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেত না।এই গ্রামের ৫০ থেকে ৬০ ঘর বাঁশের ডালা,কুলো বানিয়ে সারা বছর সংসার চালাতো এক সময়।এখন বেশ কিছু পরিবার এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে।উৎসব- অনুষ্ঠানে কাজ থাকলেও বছরের অন্য সময় বাঁশের সামগ্রী সেভাবে বিক্রি না হওয়ায় বা অন্যত্র বাজার না থাকায় সংসার চালাতে সমস্যার কারনে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন শিল্পী উর্মিলা দাস।তিনি বলেন,এই কাজ করে পেটের ভাতের জোগাড় হয় না।তাই বাঁশের কাজ ছেড়ে মানুষের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নিয়েছি। পাইকাররা পারিশ্রমিক দিতে চায় না,তাই ইচ্ছে হলেও আর এই কাজ করতে পারিনা।
আরেক শিল্পী লক্ষ্মী দাস জানান,সরকারী ভাবে ট্রেনিং করেছি এবং সামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন মেলায় গিয়েছি।কিন্তু উৎপাদিত জিনিসের স্থানীয় বাজার না থাকায় মহাজনেরা খুব কম দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যান।লাভ তো হয় না,পারিশ্রমিক পাই না।তাই সংসার চালাতে এখন আর শিল্পী নই আমি। শিল্পী সান্ত্বনা দাস জানান,আমরা স্বামীস্ত্রী কুলো,ডালা সহ ঘর সাজানোর সব রকমের জিনিস তৈরি করি।সারা বছর এই কাজ করলেও উৎসবের সময় বিক্রিটা বেশি হয়।বছরের অন্য সময় খুব কষ্ট হয়।তবুও এই কাজ করতে হয়।সরকার যদি আমাদের মতো শিল্পীদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করত তাহলে এই পেশা ছেড়ে কেউই যেত না।
কোতগ্রামের প্রতিটি শিল্পীর প্রায় একই রকম অভাব অভিযোগ।দাবি একটাই সরকার তাদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুক।যদিও পাইকারদের দাবি,সারা বছর সেভাবে ডালা ও কুলোর চাহিদা থাকে না।যা হয় জামাই ষষ্ঠী, ছট পূজাতে।
তবুও আমরা শিল্পীদের কথা ভেবে তাদের তৈরি জিনিস কিনে থাকি।বিক্রি না হওয়ায় অনেক জিনিস নষ্ট হয়।তাই কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।প্রদীপ সরকার নামে এক ব্যবসায়ী জানান,গুনমান ভালো হলে আমরা ন্যায্য দাম দিয়ে কিনে থাকি।ক্রেতারা না কিনলে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।অন্যদিকে, জেলা শিল্প কেন্দ্রের অধিকর্তা সুনীল সরকারের দাবি,শিল্পীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।বিভিন্ন মেলায় তাদের যাতায়াতের খরচ দেওয়া হয়।এমনকি শিল্পীদের পেনশনের ব্যবস্থা করেছে সরকার।তিনি বলেন সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যদি তারা বাঁশের সামগ্রী তৈরি করেন অবশ্যই চাহিদা আছে।আমরা তাদের পাশে রয়েছি সব সময়।