লকডাউনের জেরে সমস্ত কলেজ বন্ধ হলেও ইটাহার ডঃ মেঘনাদ সাহা কলেজ ই ক্লাস রুম চালু করলো
1 min readলকডাউনের জেরে সমস্ত কলেজ বন্ধ হলেও ইটাহার ডঃ মেঘনাদ সাহা কলেজ ই ক্লাস রুম চালু করলো
তপন চক্রবর্তী-কালিয়াগঞ্জ-উত্তর দিনাজপুর–করোনা লকডাউনের ফলে যখন সারা রাজ্য তথা সমগ্র ভাতরবর্ষের স্কুল থেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ।তখন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহারে ডঃ মেঘনাদ সাহা কলেজ ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থের কথা ভেবে অভিনব উপায় বের করে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
সিলেবাস শেষ হবে কী করে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন পড়ুয়ারা থেকে অধ্যাপকেরা।ছাত্রছাত্রীদের সেই দুশ্চিন্তা দূর করতে পঠনপাঠন চালু রাখার জন্য শুক্রবার থেকেই ক্লাস চালু করল ইটাহারের ডঃ মেঘনাদ সাহা কলেজ। একদিকে সংক্রমণ এড়িয়ে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াই। আপাত অদৃশ্য এক ভাইরাস এসে এই দুই লড়াইকেই যেন আরও কঠিন করে দিয়েছে। করোনা আক্রমণের হাত থেকে বাাঁচতে সরকারি নির্দেশ মেনে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী সকলেই এখন গৃহবন্দি।
ফলে পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে।এই দুশ্চিন্তা যখন গ্রাস করছে গৃহবন্দি কলেজ পড়ুয়াদের, তখন তাঁদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন ইটাহার কলেজের শিক্ষকরা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা করেন কলেজের প্রশাসক সুব্রত সাহা, উপাধ্যক্ষ মুকুন্দ মিশ্র, আইকিউএসির সদস্য সেঁজুতি দে, টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক চন্দ্রানী হালদার বণিক, ন্যাক-এর আহ্বায়ক সুকুমার বাড়ই ও অনলাইন কমিটির আহ্বায়ক ইউসুফ আজিম। সমস্ত দিক আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে বসেই যদি ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করতে হয়, তাহলে পোর্টাল ই-ক্লাসরুম চালু করা দরকার। সেই সিদ্ধান্ত মতোই শুক্রবার থেকে তড়িঘড়ি ডঃ মেঘনাদ সাহা কলেজে শুরু করা হল অনলাইন পোর্টাল ই-ক্লাসরুম।
পুরো প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য গঠন করা হয়েছে ই-ক্লাসরুম কমিটি।কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই পোর্টালে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরা তাঁদের নিজ নিজ বিষয়ে নোটস এবং প্রশ্নোত্তর আপলোড করা শুরু করেছেন। ই-ক্লাসরুমে শিক্ষকদের প্রবেশ করতে হবে টিচার্স লগ ইন করে। স্টুডেন্টস আইডি ও ফোন নম্বর দিয়ে লগ ইন করে পড়ুয়ারা ওই পোর্টালে প্রবেশ করলেই পেয়ে যাবেন নির্দিষ্ট বিষয়ে স্টাডি মেটেরিয়ালস। বিষয় ও শিক্ষকের অনুসারে নির্দিষ্ট সিস্টেমেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে ই-ক্লাসরুম। কলেজের সেকেন্ড সেমেস্টার, পার্ট টু ও পার্ট থ্রির পড়ুয়ারা উপকৃত হবেন এই ই-ক্লাসরুমের মাধ্যমে। ফলে লকডাউনের এই তিন সপ্তাহ পড়ুয়ারা ঘরে বসেই নিজেদের পড়াশোনা চালাতে পারবেন। কারও কোনও বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে কিংবা কোনও বিষয়ে বক্তব্য বা প্রশ্ন থাকলে অনলাইনে ই-ক্লাসের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকের সঙ্গে সেই ব্যাপারে মতামত আদানপ্রদানও করতে পারবেন পড়ুয়ারা।নতুন এই পদ্ধতিতে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি জেন ওয়াই পড়ুয়ারা। পার্ট থ্রির ভূগোল অনার্সের ছাত্রী পূর্ণিমা সরকার বলেন, খুবই খুশির খবর। লকডাউনের জন্য কলেজ বন্ধ। আমার তো এবার ফাইনাল ইয়ার। ক্লাস না হওয়ায় খুব চিন্তায় পড়েছিলাম। এভাবে দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ থাকার ফলে পড়াশোনা না হওয়ায় সিলেবাস শেষ হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। কিন্তু কলেজের স্যাররা এভাবে আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেওয়ায় ভীষণ উপকার হল। সত্যিই আমাদের কলেজের স্যাররা সকলেই আমাদের প্রতি অত্যন্ত দায়িত্বশীল। অপর এক ছাত্র রাজেশ সরকার বলেন, স্যারদের এই উদ্যোগে ভীষণ উপকৃত হলাম। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। কলেজ বন্ধ থাকায় পড়াশোনাও শিকেয় উঠেছিল। এবার আর চিন্তা নেই। এই কটা দিন ঘরে বসেই অনার্সের পড়াশোনা চালাতে পারব।কলেজের উপাধ্যক্ষ মুকুন্দ মিশ্র বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার আঁচ লেগেছে শিক্ষা মহলেও। ক্ষতির মুখ থেকে রেহাই পাচ্ছে না ছাত্র সমাজও। কারণ দেশ জুড়ে লকডাউনের ফলে পঠনপাঠন ভীষণ ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে আমাদের কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা আজ থেকে ইক্লাসরুম চালু করলাম, যাতে লকডাউন চলাকালীন ঘরে বসেই পড়াশোনা চালাতে পারে পড়ুয়ারা।