December 22, 2024

লোকসংস্কৃতি ও লোক শিল্পের পীঠস্থান “উত্তর দিনাজপুর”

1 min read

লোকসংস্কৃতি ও লোক শিল্পের পীঠস্থান “উত্তর দিনাজপুর”

তপন চক্রবর্তী– -চাল ,চিড়া,চিনি গুড় ভএই নিয়েই দিনাজপুর বলা হত।কিন্তূ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই প্রবাদের এখন অনেকেটাই পরিবর্তন হয়েছে।এখন প্রবাদটি পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে “চাল চিড়া চিনি গুড় মুখা নাচ খন গানের সুর,এই নিয়ে নয় মোদের উত্তর দিনাজপুর।টেরা কোটা, কার্পেট, ধকরা তুলাইপঞ্জির সুগন্ধি চাল এই নিয়েই উত্তর দিনাজপুর ভরপুর।আসলে উত্তর দিনাজপুরের মাটি বর্তমানে লোক সংস্কৃতির ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।আমরা এই চাল চিড়া চিনি গুড় নিয়ে যেমন আগে গর্ব করতাম

এখন আমাদের গর্বের পরিধির বিস্তার ঘটেছে অনেকাংশেই।আমরা এই মুহূর্তে দিনাজপুর তথা উত্তর দিনাজপুরের মুখা নাচ নিয়ে গর্ব করি তার কারণ হেমতাবাদের শচীন রায়ের নিজের হাতে বানানো দশ মাথার রাবন আজও লন্ডনের মিউজিয়ামে বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিতে পেরেছে।তাছাড়া দাসিয়ার উমাইচন্ডী মুখা নৃত্য দল সারা রাজ্যে তাদের নিজের গুনেই সর্বত্র সম্মানিত যেমন তেমনি উত্তর দিনাজপুর জেলার লোকসংস্কৃতির মানচিত্রে আমাদের জেলাবাসীর গর্ব।উত্তর দিনাজপুর জেলার রাজবংশী সমাজের তথা উত্তর দিনাজপুর জেলার মূল সংস্কৃতি ” খন পালা বা খন গান”সারা রাজ্যে নিজের বৈশিষ্ট্যগত কারনে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত।পূর্বের খন পালা আর বর্তমানের খন পালা অনেকাংশেই পরিবর্তিত।” খন পালা হালুয়া হালুয়ানী যখন কলকাতার বিভিন্ন সর্বভারতীয় মঞ্চে উপস্থ্যাপন করে তখন কলকাতার দর্শকমন্ডলী নুতন কিছু উপভোগ

করে যা কলকাতায় এক কথায় বিরল ঘটনা।মঞ্চে যখন হালুয়া হালুয়ানী পালা চলে সর সেই সময় হালুয়া বলদের ঘাড়ে লাঙল চাপিয়ে স্টেজে যখন প্রবেশ করে সেই দৃশ্য কলকাতা বা দিল্লির মঞ্চে অবশ্যই সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবী মহলে প্রশংশার দাবি রাখে। উত্তর দিনাজপুর খন পালাকারদের পালাগানের কারণেই আমরা গর্ববোধ করি।মঞ্চে যখন মানুষরূপী বলদ প্রবেশ করে জমি চাষ করে সেই দৃশ্য ভোলার নয়। কয়েক বছর পূর্বে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সর্বভারতীয় মেলায় কলকাতার একটি মঞ্চে জেলার লোকসংস্কৃতিকে তুলে ধরবার জন্য খন পালা “হালুয়া হালুয়ানী” নিয়ে গিয়ে মঞ্চস্থ করা হয়। সেই সময় সমবায় বিভাগের মন্ত্রী, সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রার সহ উচ্চ পদস্থ সমবায় বিভাগের আমলারা সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন।মন্ত্রী বলেই ফেললেন এটাইতো মাটির লোকসংস্কৃতি। ।মনে হচ্ছিল কোন একটি জমিতে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছি।উত্তর দিনাজপুরের লোকসংস্কৃতির প্রশংসা না করে পারছিনা।সেখানে ছিল বিদেশি বেশ কিছু রিপোটার ও ক্যামেরাম্যান।তারা একটার পর একটা সেই নাটকের ছবি তুলে যাচ্ছিলেন।তাই বলছি আমাদের উত্তর দিনাজপুর জেলার লোকশিল্প এবং লোকসংস্কৃতি অনেক জেলার থেকেই অনেক উন্নত।আমাদের উত্তর দিনাজপুর জেলার লোকসংস্কৃতি এবং লোকশিল্প কোনটাই কারো থেকে কেউ কম নয়।এই জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কুনোর হাটপাড়া গ্রামে ঘর ঘর টেরাকোটা শিল্পী রয়েছে।তারা এখন আর মাটির হারি,গ্লাস বা প্রদীপ তৈরী করতে চায়না।কুনোরের টেরাকোটার গলার হার, হাতের টেরাকোটার ব্রেসলেট,কানের দুল ভারতবর্ষের মুম্বাই,গোয়া,রাজস্থান,দিল্লি,ব্যাঙ্গালোর কোথায় যাচ্ছেনা? ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে এরা বাজার করে নিয়েছে।অভুতূর্ব সেইসব টেরাকোটার অলঙ্কার।যা দেখলেই আপনার পরিবারের মানুষদের কিনতে ইচ্ছা করতেই হবে।আমার সাথে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আমাদের প্রয়াত প্রিয়দার পরিবারের সবাই কুনোরের হাট পাড়ায় গিয়েছিল টেরাকোটার মাটির শিল্প দেখতে ।বিখ্যাত টেরাকোটা শিল্পী দুলাল রায়কে সবার পরিচয় জানিয়ে বললাম তোমার টেরাকোটার বিখ্যাত জিনিষ গুলি দেখাতে হবে।দুলাল রায় সাথে সাথে টেরাকোটার অলঙ্কার গুলো বের করবার সাথে সাথে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন বৌদিরা।কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে বড় সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।তারপর টেরাকোটার মাটির তৈরী অলংকার আনুমানিক ১২হাজার টাকার ক্রয় করলেন। বললেন কালিয়াগঞ্জের ছেলে হয়েও কালিয়াগঞ্জকে ঠিক মত চিনতে পারিনিরে।এই হচ্ছে কুনোরের টেরাকোটা যা বিশ্বের বাজারে কালিয়াগঞ্জের সন্মান কোথায় নিয়ে গেছে।পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জের মালগাঁওয়ের কার্পেট কারো চেয়ে কম নয়।দেশ বিদেশে কালিয়াগঞ্জের মালগাঁওয়ের কার্পেট শুধু উত্তর দিনাজপুর জেলা বা রাজ্য নয় ভারতবর্ষের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছে।মালগাঁওযের মত অজ গ্রামে অত্যাধুনিক কার্পেট তৈরি হচ্ছে এর চেয়ে লোক শিল্পের গর্ব আর কি হতে পারে।সরকার কার্পেট শিল্পকে বড়এ মাত্রায় নিয়ে যাবার ব্যাপক চেষ্টা করছে এতে কোন সন্দেহ নেই।ঠিক একই রকম ভাবে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বালাস গ্রামের বাড়ি বাড়ি কুটির শিল্পের চেহারা লোকশিল্পের ধকরা।রাজবংশী সমাজের গৃহবধূরা সংসারের কাজ সেরে অবসর সময়ে এই কাজ করে অতিরিক্ত রোজগার করে থাকে।বালাস গ্রামের রাজবংশী সমাজের মানুষদের দাবি সেখানে একটি সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠলে জেলার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে উঠবে বলে তাদের ধারণা।তাই দিনাজপুর লোকসংস্কৃতি ও লোকশিল্পের পীঠস্থান তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *