একবার এক নজরে উত্তর দিনাজপুর জেলা কে চিনুন
1 min readএকবার এক নজরে উত্তর দিনাজপুর জেলা কে চিনুন
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুরের জেলা সদর। বেশ পরিচিত শহর উত্তরবঙ্গের মধ্যে। এই রায়গঞ্জেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম অভয়ারণ্য কুলিক পক্ষীনিবাস। এছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি পার্ক, মিউজিয়াম, রাজবাড়ী সহ একাধিক দর্শনীয় স্থান। আসুন একনজরে দেখে নি রায়গঞ্জে কোথায় কোথায় ঘুরতে যেতে পারেন আপনি।
রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষীনিবাস :- রায়গঞ্জ বলতেই সবার প্রথমে যেই জায়গাটি ভ্রমণ এর কথা বলতে হয় সেটি হল রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষীনিবাস। শুধু রায়গঞ্জ নয় জেলা তথা বিশ্বের অন্যতম অভয়ারণ্য হল এই কুলিক পক্ষীনিবাস। রায়গঞ্জ শহরের শিলিগুড়ি মোড় থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে পাওয়ার হাউস মোড় পেরোলেই আপনি দেখতে পাবেন এই কুলিক পক্ষীনিবাস। কুলিক নদীর গা ঘেঁষে আব্দুলঘাটার বিরাট বনাঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে এই কুলিক পক্ষীনিবাস। আগে থেকেই ঘন বনাঞ্চল ছিল এই অঞ্চলে তবে পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই কুলিক নদীর ধারে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপণ করা হয় কদম, শিশু, ইউক্যালিপটাস সহ একাধিক বৃক্ষ। এই কুলিক পক্ষীনিবাস এর মূল আকর্ষণ হল পরিযায়ী পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এই কুলিক বনাঞ্চলে এসে ভিড় জমায়। নাইট হেরণ, কর্মোরেন্ট, ওপেন বিল স্টক প্রভৃতি শতাধিক প্রজাতির পাখি এখানে আসে প্রতিবছর। হিসেব করলে দেখা যাবে প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার পাখি এখানে আসে। যেহেতু প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক পর্যটক এখানে আসে সে কারণে এখানে তৈরি করা হয়েছে টুরিস্ট লজ। যা একেবারেই কুলিক পক্ষীনিবাসের বিপরীতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইট থেকেই এই সরকারি ভবনটিতে যোগাযোগ করে থাকতে পারবেন আপনি। শুধুমাত্র থাকাই নয় খাওয়ারেরও সুবন্দোবস্ত রয়েছে এখানে। তাই পাখিদের কলরব শুনতে আপনি আসতেই পারেন রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষীনিবাসে।
রায়গঞ্জ পার্ক :- রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষীনিবাসে দর্শনের পর আপনার গন্তব্য হতেই পারে রায়গঞ্জের পার্কগুলিতে। যার মধ্যে কুলিক পক্ষীনিবাস সংলগ্ন ইকো পার্ক, রায়গঞ্জ মিউনিসিপাল পার্ক এবং রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় অবস্থিত পার্ক। প্রথমেই বলব রায়গঞ্জ মিউনিসিপাল পার্ক সম্পর্কে। এই পার্কটি পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত। শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য পার্কে বোটিং, ট্রয় ট্রেন, বিভিন্ন ধরনের মডেল, স্লিপার, দোলনা সহ নানান ক্রীড়া সামগ্রী রয়েছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও নতুনভাবে, নতুন করে পৌরসভা সাজিয়ে তুলেছে পার্কটিকে। এবারে আসা যাক রায়গঞ্জ ইকো পার্কে। রায়গঞ্জ ইকো পার্ক কুলিক পক্ষীনিবাস সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সৌজন্যে পার্কটি পরিচালিত হয়। পার্কে বাগান, বোটিং সহ নানান ধরনের ক্রীড়া সামগ্রী সহ সাধারণ মানুষদের বিনোদনের জন্য এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়। আর সবশেষে আসা যাক রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া পার্কে। এই পার্কটিও বেশ সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এখানেও প্রকৃতির মাঝে শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য নানান উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পার্ক চত্বর। তিনটি পার্কেই প্রবেশের ক্ষেত্রে রয়েছে টিকিটের ব্যবস্থা। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে পার্কে।
রায়গঞ্জ সেন্ট জোসেফ চার্চ :- এরপর আপনার গন্তব্য হতে পারে রায়গঞ্জে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ চার্চ। রাজ্যের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এবং সেরা চার্চ হল এই সেন্ট জোসেফ চার্চ। রায়গঞ্জের মিশন মোড় এলাকায় অবস্থিত এই চার্চ। প্রতিবছর বড়দিনে তথা প্রভু যীশুর এই সেন্ট জোসেফ চার্চ প্রাঙ্গণে ভিড় জমান মানুষেরা। তবে করোনার জেরে দুবছর সেন্ট জোসেফ চার্চ প্রাঙ্গণে প্রবেশাধিকার ছিল না সাধারণ মানুষের। চার্চের গেটের বাইরেই মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা সারেন সাধারণ মানুষ। তবে রায়গঞ্জ ভ্রমণে আপনার অন্যতম গন্তব্য হতেই পারে এই দর্শনীয় স্থান।
রায়গঞ্জ কর্ণজোড়া মিউজিয়াম :- রায়গঞ্জ শহরে বসবাসকারী যারা রয়েছো তারা অনেকেই পরিচিত রায়গঞ্জ কর্ণজোড়ায় অবস্থিত মিউজিয়াম সম্পর্কে। প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্রের নানা সংগ্রহ রয়েছে এই মিউজিয়ামে। সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই মিউজিয়াম খোলা থাকে। তবে শনিবার এবং রবিবার বন্ধ থাকে এই মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে রয়েছে প্রাচীনকালের বহু জিনিস। পোড়ামাটির নানান কাজ দৃষ্টি আকর্ষণ করে সকলের। এছাড়াও প্রাচীনকালের কর আদায় করার নানান নথিপত্র রয়েছে এই মিউজিয়ামে।বিরল ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সংরক্ষণ রয়েছে এই মিউজিয়ামে।
রায়গঞ্জ বাহিন রাজবাড়ী :- এরপর আপনার গন্তব্য হতেই পারে রায়গঞ্জে অবস্থিত বাহিন রাজবাড়ী। রায়গঞ্জ ব্লকের বাহিন গ্রামে অবস্থিত এই রাজবাড়ী। এখানে আসলে আপনি দেখতে পারবেন বাংলা ও বিহার সীমান্তে নাগর নদীর পার্শ্ববর্তী একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ। এই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য আপনি পাবলিক বাসষ্ট্যান্ড থেকে টোটো নিয়ে যেতে পারেন। নৌকাভ্রমন করতে পারবেন সেখানকার নাগর নদীতে। এছাড়াও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার চিত্ত আকর্ষণ করতে বাধ্য। বর্তমানে সেখানে একটি পুলিশ ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছে। তবে সবদিক থেকে বিচার করলে এই স্থানটিতে এখনও না গেলে অবশ্যই ভ্রমণ করতে পারেন।
রায়গঞ্জ দেবপুরী :- রায়গঞ্জে আসলে আপনি এই দেবপুরী জায়গাটি ভ্রমনে যেতে পারেন। এই এলাকাটি একেবারে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী স্থানে। এখানে গেলে আপনার মন জুড়িয়ে যেতে বাধ্য। প্রথমেই আপনি দেখতে পাবেন দেবাদিদেব মহাদেবের বিশাল মন্দির। যেখানে রয়েছে মহাদেবের বিশাল মূর্তি। ভক্তরা এখানে ভিড় জমান পুজো দিতে। দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দিরের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। এখানে আসলে আপনার চিত্ত আকর্ষণ করবে অবশ্যই।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় বাগান :- রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানও বেশ সুন্দর একটি স্থান। বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য এই বাগান স্থাপন করা হয়। এই বাগানের বেশিরভাগ গাছ ভেষজ গুণ সম্পন্ন। এই বাগান স্থাপনের জন্য একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিস্তর সুবিধা হয় অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এইসমস্ত গাছের ব্যবহার সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানা যাবে। এর ঠিক পাশেই রয়েছে একটি বিশালাকার পুকুর। যা প্রাকৃতিক শোভা আরো বাড়িয়ে তোলে।
রায়গঞ্জ জগন্নাথ মন্দির :- রায়গঞ্জ শহরের পূর্ব নেতাজীপল্লীতে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। যেই মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে এবছর রথযাত্রা উৎসবের দিন। এই মন্দিরে কিন্তু অনেকেই ভিড় জমান।
রায়গঞ্জ ইস্কন মন্দির :- রায়গঞ্জ শহরে রয়েছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ বা ইস্কন মন্দির। ১০ ই জুন ২০২২ এই মন্দিরের শুভ সূচনা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষেরা এই মন্দিরে ভিড় জমান।
রায়গঞ্জ বন্দর আদি কালীবাড়ি :- রায়গঞ্জ শহরের অন্যতম একটি কালী মন্দির হল রায়গঞ্জ বন্দর আদি কালীবাড়ি। বেশ জাগ্রত এই মন্দির। প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছরের প্রাচীন এখানকার কালীপুজো। প্রাচীনত্ব এবং দেবীর মহিমার টানেই ভক্তরা এখানে ভিড় করেন।
রায়গঞ্জ বিন্দোল ভৈরবী মন্দির :- রায়গঞ্জ শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রায়গঞ্জের বিন্দোল নামের এই গ্রামটি। সীমান্তবর্তী বিন্দোলের একটি গ্রাম বাজে বিন্দোল। এখানেই রয়েছে সুপ্রাচীন এই ভৈরবী মন্দির। মন্দিরের গায়ে রয়েছে টেরাকোটার প্রাচীন অভূতপূর্ব কারুকার্য। মন্দিরের পাশে পূর্বে একটি নদীর অস্তিত্ব থাকলেও পরবর্তীতে সেই নদী আর নেই। এই স্থানেও কিন্তু ঘুরতে আসতে পারেন আপনি।
রায়গঞ্জ বিন্দোল বুরহানা ফকিরের মসজিদ :- বিন্দোল ভৈরবী মন্দিরের পাশেই রয়েছে বুরহানা ফকিরের মসজিদ। যা বালিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। কথিত আছে প্রায় ৫০০ বছর আগে বুরহানা ফকির এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে সংস্কারের অভাবে মন্দিরের বেহাল দশা। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রচুর পর্যটক এই মসজিদের দর্শনের জন্য আসেন। এখানেও কিন্তু ঘুরতে যেতে পারেন আপনি।
ADOBE PREMIERE PRO CRACK | FEBRUARY 2023 UPLOAD https://youtu.be/nJhhKTPbsM4