রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড নিয়ে আলোচনা-
1 min read
তপন চক্রবর্তী- কালিয়াগঞ্জ–উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালযে গত ২৩শে এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃত্সর শহরের সেই জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড শীর্ষক একটি মনোজ্ঞ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ডঃ অনিল ভুইমালি,বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক দুর্লভ সরকার,বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক কালিশঙ্কর তেওয়ারী,কলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডঃ দীপক কুমার রায়,ফিন্যান্স অফিসার শঙ্কর দলই।
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক ছিলেন বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক কালি শঙ্কর তেওয়ারী।তিনি তার আলোচনায় রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তার চরম পরিণতি কি ভাবে দেখা দেয় জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডে তার লোমহর্ষক বক্তব্যে ফুটে ওঠে।পাঞ্জাব সীমান্ত সংলগ্ন আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রভাবে পাঞ্জাব বহু পূর্ব থেকেই বিক্ষুব্ধ ছিল।পাঞ্জাবের মুখ্য প্রশাসক লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার মাইকেল ও ডায়ারের স্বৈরাচারী শাসনে পাঞ্জাব যথার্থই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছিল।
১০ইএপ্রিল পাঞ্জাবের দুই নেতা ডঃ সত্য পাল ও ডঃ সাইফুদ্দিন কিচলু কে গ্রেপ্তার ও বিনা বিচারে অজ্ঞাত স্থানে অন্তরিন করে ব্রিটিশ সরকার পাঞ্জাবে ঝড়ের সূত্রপাত করে।গান্ধীজির গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশিত হওয়া মাত্র ঐ সময় লাহোরে স্বতস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়।গান্ধীজি ও পাঞ্জাবের দুই নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অমৃতসর শহরে শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা বের হলে পুলিশ তার উপরে বেপরোয়া গুলি চালিয়ে থাকে।বহু মানুষ হতাহত হয়।উন্মত্ত জনতা এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি ধ্ব ঙসের কাজে লিপ্ত হয়।পরের দিন ১১ইএপ্রিল পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে জনতা পুলিশ সংঘর্ষ চলতে থাকে।ব্রিটিশ সামরিক শাসনকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ার অমৃত্সর শহরের শাসনভার নেবার পরেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে যায়।শুরু করে দেয় বেপরোয়া গ্রেপ্তার সভা সমিতির উপর চলে নিষেধাজ্ঞা।
আগের থেকেই স্থির ছিল অমৃত্সর শহরের পূর্বদিকে জালিয়ানওয়ালাবাগের উদ্যানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে ১৩ই এপ্রিল।প্রায় দশাজার নিরস্ত্র মানুষ সভায় উপস্থিত হয়।ব্রিটিশ সরকারের সেনাবাহিনী জেনারেল ডায়ার নেতৃত্বে কোনরকম আগাম সতর্ক না করেই পঞ্চাশটি রাইফেল থেকে পুরোপুরি দশ মিনিটে ১৬০০রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।যদিও সরকারিমতে নিহতের সংখ্যা ৩৭৯ও আহতদের সংখ্যা বলা হয়েছিল১২০০জন।
কিন্তু সেই হিসাব ছিলনা সঠিক।অনেকের মতে সেদিন নিহতের আসল সংখ্যা ছিল সহস্রাধিক।কেবল মাত্র অমৃত্সর শহরেই নয় পাঞ্জাবের ৫টি জেলায় সামরিক আইন জারি করে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ বন্ধ করে দেবার মত অমানুষিক অত্যাচার করেছিল।এই বক্তব্যের সময় যেন উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী,শিক্ষক শিক্ষিকা ও উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে যেন জালিয়ানওয়ালাবাগের সেদিনের সেই পরিবেশ অধ্যাপক কালি শংকর তেওয়ারী আনতে সক্ষম হযে উঠেছিল।সভায় রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ অনিল বহুইমালিভূঁইমালির বক্তব্য ও ছিল অসাধারন।অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক বাবুলাল বালা।স্বাগত ভাষণ দেন বিশ্ব বিদ্যালয়ের নিবন্ধক অধ্যাপক দুর্লভ সরকার।অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডঃ অনিরুদ্ধ দাস জালিয়ানওয়ালাবাগের সেদিনের সেই দুর্লভ ছবি এনে প্রদর্শন করলে তা দেখে সবাই মুগ্ধ হন।অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সঞ্চালনা করেন ডঃ তুহিনা ইসলাম।