October 30, 2024

মনোনয়নের পরে আত্মবিশ্বাসী শুভেন্দু  বললেন ২ মে মিষ্টি খেতে হবে তো

1 min read

মনোনয়নের পরে আত্মবিশ্বাসী শুভেন্দু  বললেন ২ মে মিষ্টি খেতে হবে তো

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন। সেটিকে ঘিরে বহু দিন ধরেই ব্যাপক উত্‍সাহ, উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে সংশ্লিষ্ট দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু একুশের নির্বাচনের আগে মনোনয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে রোড শো কর্মসূচি। যেটা সাম্প্রতিককালে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে। আজ শুক্রবার নন্দীগ্রাম বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রীতিমতো রোড শো করে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। তার আগে সভায় বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু। সেখানে হাজির ছিলেন বিজেপির দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং ধর্মেন্দ্র প্রধান। এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতায় এসেছিলেন তাঁরা। কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে নন্দীগ্রাম পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। অর্থাত্‍ শুভেন্দুকে গেরুয়া শিবির কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটা এতেই পরিষ্কার।জনসভার মঞ্চ থেকে শুভেন্দুর পাশাপাশি স্মৃতি এবং ধর্মেন্দ্র তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে ধরেন শুভেন্দু। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,” অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু এখন সব বলে দিলে হয়! ২ মে মিষ্টি খেতে হবে তো”‌। এভাবেই নিজের জয়ের ব্যাপারে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী দেখায় তাঁকে। উল্লেখ্য নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে এবার দাদা- দিদির লড়াই হচ্ছে। সেখানে মমতা এবং শুভেন্দুর মধ্যে শেষপর্যন্ত কে বাজিমাত করেন, সেদিকে তাকিয়ে রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশ। এদিকে অত্যন্ত তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে শুভেন্দু তাঁর বক্তব্যে একবারের জন্যেও মমতার আহত হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেননি। শুধু আজ বলে নয়, গতকাল বৃহস্পতিবার শুভেন্দু শিবরাত্রি উপলক্ষে নন্দীগ্রামের বেশ কয়েকটি মন্দিরে পুজো দেন। পরে তিনি বক্তব্যও রাখেন। কিন্তু গতকালও শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রীর ঘটনা নিয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন, এই অভিযোগ এনে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদে নেমেছে তৃণমূল।আহত হওয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৪-৫ জন তাঁকে ধাক্কা দিয়েছে। তাতেই গাড়ির দরজায় তাঁর পা চেপে যায়। গুরুতর আহত হয়ে তিনি ভর্তি হন এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু গতকাল মুখ্যমন্ত্রী যে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন হাসপাতালের বেডে শুয়ে, তাতে তিনি একবারের জন্যেও ধাক্কা মারার কথা বলেননি। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, নন্দীগ্রামে আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্যই তাঁর বয়ান বদল করেছেন। তাই মনে করা হয়েছিল শুভেন্দু হয়ত এই বিষয়টি নিয়ে আজ কোনও মন্তব্য করবেন। কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটেননি তিনি। আসলে সেই বিষয়টি নির্বাচনের আগে আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠুক, এটা চাইছেন না তিনি। কারণ এর ফলে মমতা ভোটারদের কাছ থেকে সিমপ্যাথি পেয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছেন শুভেন্দু। সম্ভবত সেই কারণেই বিষয়টি নিয়ে তিনি একটি কথাও বলেননি। যদিও তাঁরা বাবা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী বলেছেন, মমতা আক্রান্ত হননি। ওটা একটা দুর্ঘটনা।শিশির অধিকারীর এমন বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল। এদিকে শুভেন্দুর প্রচারে রীতিমতো তারকা সমাগম হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই আজ রোড শোতে অংশ নিয়েছেন স্মৃতি ইরানি, ধর্মেন্দ্র প্রধানরা। আগামীদিনে শুভেন্দুর হয়ে প্রচারে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাসহ শীর্ষ নেতৃত্ব। গায়ক তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, চিত্রতারকা তথা সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া মিঠুন চক্রবর্তীরাও আসবেন শুভেন্দুর প্রচারে। একইভাবে প্রচারে সামিল হবেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া টলিউড তারকারা। এখন প্রশ্ন, এই মেগাপ্রচারের কতটা সুফল ঘরে তুলতে পারবেন তিনি? সেই বিষয়টি নিয়ে চর্চা এখন তুঙ্গে। উল্লেখ্য নন্দীগ্রামে হিন্দু ভোটারদের সংখ্যা সংখ্যালঘু ভোটারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। শুভেন্দু এর আগে বলেছেন, শুধু হিন্দু ভোট নয়, মুসলিম ভোটেরও অনেকটা তিনি পাবেন। এই দাবি করছেন জোরের সঙ্গে। উল্লেখ্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে জনসভা মঞ্চে অন্যান্যদের সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকেও দেখা গিয়েছে। শুভেন্দু তাই বলেন,” আমরা জাতপাতের রাজনীতি করি না। ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ, সবকা বিকাশের কথা বলেন। তিনি যে সমস্ত প্রকল্প নিয়ে এসেছেন তার সুবিধা পাচ্ছেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ।তাই নন্দীগ্রামে আমরা বিপুল ভোটে জিতব। কে সেখানে দ্বিতীয় হবেন সেটা জানি না। তবে বিজেপি সেখানে প্রথম হতে চলেছে”‌ । নন্দীগ্রাম নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাস রয়েছে তাঁর। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে আহত হয়েছেন নন্দীগ্রামে গিয়ে, যেভাবে তিনি বলেছেন হুইলচেয়ারে প্রচারে যাবেন, তাতে সাধারণ মানুষের আবেগ বহুগুণ বেড়ে যাবে তাঁকে নিয়ে। শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টার কিছু পরে এসএসকেএমের চিকিত্‍সকরা মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অর্থাত্‍ এটা পরিষ্কার মুখ্যমন্ত্রী শীঘ্রই প্রচারে ফিরছেন। তাই হুইলচেয়ারে করে মুখ্যমন্ত্রী প্রচার করছেন, এই দৃশ্য বেশ একটা আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। যদিও বিজেপির দাবি, ওটা একটা দুর্ঘটনা। মমতার ওপর কেউ আক্রমণ করেননি। উল্লেখ্য এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে চাপানউতোর এখন তুঙ্গে। সুদূর অতীতে বাংলার কোনও বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে এত চর্চা হয়নি। নন্দীগ্রামে ভোট নয়, যেন সেখানে কুরুক্ষেত্রের মতো যুদ্ধ হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে আজ মনোনয়নপত্র জমা দিলেন শুভেন্দু। আর তারপর রোড শোয়ে ব্যাপক জনসমর্থন দেখা গেল তাঁর পক্ষে। এই দৃশ্য যে শুভেন্দুকে বাড়তি এনার্জি দিয়েছে, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *